" আমি মৃত্যুর রাখাল
সৃষ্টিকে চরিয়ে চরিয়ে নিয়ে চলেছি
যুগ হতে যুগান্তরে
নব নব চারণ ক্ষেত্রে।
যখন বইল জীবনের ধারা,
আমি এসেছি তার পিছনে,
দিইনি তাকে কোনো গর্তে আটকে থাকতে
তীরের বাঁধন কাটিয়ে কাটিয়ে
দাগ দিয়ে নিয়ে গেছি মহাসমূদ্রে,
সে সমূদ্র আমি।।"
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।।
।। ঘর ।।
- মন্দাক্রান্তা সেন
ঘর বলতে ছায়ায় ঘেরা বাড়ি
দূয়োর খুলে উঠোনে পা পড়ে
ঘর বলতে ফিরব তাড়াতাড়ি
ঘর বলতে তোমায় মনে পড়ে
ঘর বলতে মাঠের পরে মাঠ
আলের ধারে রোদ মেলেছে পা
দিঘির কোলে ভাঙা শানের ঘাট
ভাত রেঁধেছি, নাইতে যাবে না?
ঘর বলতে সন্ধে নেমে এলে
পিদিম জ্বেলে বসব পাশাপাশি
নিঝুম পাড়া, আটটা বেজে গেলে
দূরের থেকে শুনব রেলের বাঁশি
ঘর বলতে সমস্ত রাত ধরে
ঘুমের চেয়েও নিবিড় ভালোবাসা
ঘর বলতে তোমার দুচোখ ভরে
স্বপ্নগুলো কুড়িয়ে নিয়ে আসা
ঘর বলতে এসব খুটিনাটি
ঘর বলতে আকাশ থেকে ভূমি
একদিকে পথ বিষম হাঁটাহাঁটি
পথের শেষে, ঘর বলতে - তুমি।।
।। সরল রেখার জন্য ।।
- জগন্নাথ চক্রবর্তী
সামান্য একটা সরল রেখার জন্য মাথা খুঁড়ছি,
পাচ্ছি না।
পৃথিবীতে কোথাও একটা সরল রেখা নেই,
আকাশ অপরাজিতা নীল, কিন্তু গোলাকার,
দীগন্তও চক্রনেমিক্রম,
নদী আঁকাবাঁকা, পাহাড় এবড়োখেবড়ো,
হ্রদ চ্যাপ্টা, উপকূল বুকে হাঁটা সরীসৃপের মত খাঁজকাটা,
কুকুরের লেজ কুন্ডলী, হরিণের শিং ঝাঁকড়া,
গোরুর খুর দ্বিধা, আর গ্র্যান্ডট্র্যাঙ্ক রোড উধাও
কিন্তু এলোমেলো।
সৃষ্টিতে সরলরেখা বোধহয় জন্মায়নি।
যত দাগ সব হয় ডিম, নয় নারকেল, নয়ে কলার মোচা,
বৃত্ত, উপবৃত্ত ইত্যাদি,
একটাও সোজা নয়।
কোনো মানুষই সোজা নয়
তাই বোঝা শক্ত।
মাথার উপর সূর্য - জবাকুসুম -
তিনিও সোজা চলেন না,
উত্তরায়ন থেকে দক্ষিণায়ন
মাতালের মত টলছেন।
সোজা কিছুই চোখে পড়ছে না।
তোমার চোখের ঈষৎ ভাষাও
আমার বুকের মধ্যে এসে কেমন যেন বেঁকে যাচ্ছে,
আর আমার সোজা ইচ্ছেটাও তোমার দ্বিধার মধ্যে
কেবলি কৌণিক।
সামান্য একটা সরল রেখার জন্য
আমরা বসে আছি।।
।। আড়ালে ।।
- শঙ্খ ঘোষ
দুপুরে রুক্ষ গাছের পাতায়
কোমলতাগুলি হারালে
তোমাকে বক্ব, ভীষণ বক্ব
আড়ালে।
যখন যা চাই তখনি তা চাই
তা যদি না হবে তাহলে বাঁচাই
মিথ্যে, আমার সকল আশায়
নিওয়মেরা যদি নিয়ম শাসায়
দগ্ধ হাওয়ায় কৃপণ আঙুলে -
তাহলে শুকনো জীবনের মূলে
বিশ্বাস নেই, সে জীবনে ছাই
মেঘের করুণ কোমল দুপুর
সুর্য আঙুল বাড়ালে -
তোমাকে বক্ব, ভীষণ বক্ব
আড়ালে।।
।। ঈশ্বর আর প্রেমিকের সংলাপ ।।
- জয় গোস্মামী
- "সে যদি তোমাকে অগ্নিতে ফেলে মারে?"
বিনা চেষ্টায় মরে যাব একেবারে
- "সে যদি তোমাকে মেঘে দেয় উত্থান?"
বৃষ্টিতে, আমি বৃষ্টিতে খানখান
- "সে যদি তোমাকে পিষে করে ধূলোবালি?"
পথ থেকেপথে উড়ে উড়ে যাব খালি
- "উড়বে? - আচ্ছা, ছিঁড়ে দেয় যদি পাখা?"
পড়তে পড়তে ধরে নেব ওর শাখা
- "শাখা থেকে যদি নীচে ফেলে দেয় তোকে?"
কী আর করব, জড়িয়ে ধরব ওকেই
- বলো কী বলবে আদালত, কিছু বলবে কি এরপরও?
"যাও, আজীবন অশান্তি ভোগ করো!"
।। আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে ।।
- তারাপদ রায়
আমরা যে গাছটিকে কৃষ্ণচূড়া গাছ ভেবেছিলাম
যার উদ্দেশ্যে ধ্রূপদী বিন্যাসে কয়েক অনুচ্ছেদ প্রশস্তি লিখেছিলাম
গতকাল বলাই বাবু বললেন, 'ঐটি বাঁদরলাঠি গাছ'।
অ্যালসেশিয়ান ভেবে যে সারমেয় শাবকটিকে
আমরা তিন মাস বক্লস পরিয়ে মাংস খাওয়ালাম
ক্রমশ তার খেঁকিভাব প্রকট হয়ে উঠছে।
আমরা টের পাইনি
আমাদের ঝরণা কলম কবে ডট্ পেন হয়ে গেছে
আমাদের বড়বাবু কবে হেড অ্যসিস্ট্যান্ট হয়ে গেছেন
আমাদের বাবা কবে বাপি হয়ে গেছেন।
আমরা বুঝতে পারিনি
আমাদের কবে সর্বনাশ হয়ে গেছে।।
।। হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে ।।
- জয় গোস্মামী
অতল তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি ব'লে
হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে
করো আনন্দ আয়োজন ক'রে পড়ো
লিপি চিত্রিত লিপি আঁকাবাঁকা পাহাড়ের সানুতলে
যে একা ঘুরছে, তাকে খুঁজে বার করো
করেছো, অতল; করেছিলে; প'ড়ে হাত থেকে লিপিখানি
ভেসে যাচ্ছিল - ভেসে তো যেতোই , মনে না করিয়ে দিলে;
- 'প'ড়ে রইল যে!' পড়েই থাকত - সে - লেখা তুলবে ব'লে
কবি ডুবে মরে, কবি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে ।।
।। বসন্ত বন্দনা ।।
- নির্মলেন্দু গুন
হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্র-সঙ্গীতে যতো আছে,
হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে
বনের কুসুমগুলি ঘিরে । আকাশে মেলিয়া আঁখি
তবুও ফুটেছে জবা,–দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে,
তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্তপথিক ।
এলিয়ে পড়েছে হাওয়া, ত্বকে কী চঞ্চল শিহরণ,
মন যেন দুপুরের ঘূর্ণি-পাওয়া পাতা, ভালোবেসে
অনন্ত সঙ্গীত স্রোতে পাক খেয়ে মৃত্তিকার বুকে
নিমজ্জিত হতে চায় । হায় কী আনন্দ জাগানিয়া ।
এমন আগ্রাসী ঋতু থেকে যতোই ফেরাই চোখ,
যতোই এড়াতে চাই তাকে দেখি সে অনতিক্রম্য ।
বসন্ত কবির মতো রচে তার রম্য কাব্য খানি
নবীন পল্ববে, ফুলে ফুলে । বুঝি আমাকেও শেষে
গিলেছে এ খল-নারী আপাদমস্তক ভালোবেসে ।
আমি তাই লঘুচালে বন্দিলাম স্বরুপ তাহার,
সহজ অক্ষরবৃত্তে বাঙলার বসন্ত বাহার ।
।। ছন্দোরীতি ।।
- মহাদেব সাহা
তোমাদের কথায় কথায় এতো ব্যকরণ
তোমাদের উঠতে বসতে এতো অভিধান,
কিন্তু চঞ্চল ঝর্ণার কোনো ব্যাকরণ নেই
আকাশের কোনো অভিধান নেই, সমুদ্রের নেই।
ভালোবাসা ব্যাকরণ মানে না কখনো
হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনো সংবিধান নেই
হৃদয় যা পারে তা জাতিসঙ্ঘ পারে না
গোলাপ ফোটে না কোনো ব্যাকরণ বুঝে।
প্রেমিক কি ছন্দ পড়ে সম্বোধন করে?
নদী চিরছন্দময়, কিন্তু সে কি ছন্দ কিছু জানে,
পাখি গান করে কোন ব্যাকরণ মেনে?
তোমারাই বলো শুধু ব্যাকরণ, শুধু অভিধান!
বলো প্রেমের কি শুদ্ধ বই, শুদ্ধ ব্যাকরণ
কেউ কি কখনো সঠিক বানান খোঁজে প্রেমের চিঠিতে
কেউ কি জানতে চায় প্রেমালাপ স্বরে না মাত্রায়?
নীরব চুম্বনই জানি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ছন্দরীতি।
সৃষ্টিকে চরিয়ে চরিয়ে নিয়ে চলেছি
যুগ হতে যুগান্তরে
নব নব চারণ ক্ষেত্রে।
যখন বইল জীবনের ধারা,
আমি এসেছি তার পিছনে,
দিইনি তাকে কোনো গর্তে আটকে থাকতে
তীরের বাঁধন কাটিয়ে কাটিয়ে
দাগ দিয়ে নিয়ে গেছি মহাসমূদ্রে,
সে সমূদ্র আমি।।"
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।।
।। ঘর ।।
- মন্দাক্রান্তা সেন
ঘর বলতে ছায়ায় ঘেরা বাড়ি
দূয়োর খুলে উঠোনে পা পড়ে
ঘর বলতে ফিরব তাড়াতাড়ি
ঘর বলতে তোমায় মনে পড়ে
ঘর বলতে মাঠের পরে মাঠ
আলের ধারে রোদ মেলেছে পা
দিঘির কোলে ভাঙা শানের ঘাট
ভাত রেঁধেছি, নাইতে যাবে না?
ঘর বলতে সন্ধে নেমে এলে
পিদিম জ্বেলে বসব পাশাপাশি
নিঝুম পাড়া, আটটা বেজে গেলে
দূরের থেকে শুনব রেলের বাঁশি
ঘর বলতে সমস্ত রাত ধরে
ঘুমের চেয়েও নিবিড় ভালোবাসা
ঘর বলতে তোমার দুচোখ ভরে
স্বপ্নগুলো কুড়িয়ে নিয়ে আসা
ঘর বলতে এসব খুটিনাটি
ঘর বলতে আকাশ থেকে ভূমি
একদিকে পথ বিষম হাঁটাহাঁটি
পথের শেষে, ঘর বলতে - তুমি।।
।। সরল রেখার জন্য ।।
- জগন্নাথ চক্রবর্তী
সামান্য একটা সরল রেখার জন্য মাথা খুঁড়ছি,
পাচ্ছি না।
পৃথিবীতে কোথাও একটা সরল রেখা নেই,
আকাশ অপরাজিতা নীল, কিন্তু গোলাকার,
দীগন্তও চক্রনেমিক্রম,
নদী আঁকাবাঁকা, পাহাড় এবড়োখেবড়ো,
হ্রদ চ্যাপ্টা, উপকূল বুকে হাঁটা সরীসৃপের মত খাঁজকাটা,
কুকুরের লেজ কুন্ডলী, হরিণের শিং ঝাঁকড়া,
গোরুর খুর দ্বিধা, আর গ্র্যান্ডট্র্যাঙ্ক রোড উধাও
কিন্তু এলোমেলো।
সৃষ্টিতে সরলরেখা বোধহয় জন্মায়নি।
যত দাগ সব হয় ডিম, নয় নারকেল, নয়ে কলার মোচা,
বৃত্ত, উপবৃত্ত ইত্যাদি,
একটাও সোজা নয়।
কোনো মানুষই সোজা নয়
তাই বোঝা শক্ত।
মাথার উপর সূর্য - জবাকুসুম -
তিনিও সোজা চলেন না,
উত্তরায়ন থেকে দক্ষিণায়ন
মাতালের মত টলছেন।
সোজা কিছুই চোখে পড়ছে না।
তোমার চোখের ঈষৎ ভাষাও
আমার বুকের মধ্যে এসে কেমন যেন বেঁকে যাচ্ছে,
আর আমার সোজা ইচ্ছেটাও তোমার দ্বিধার মধ্যে
কেবলি কৌণিক।
সামান্য একটা সরল রেখার জন্য
আমরা বসে আছি।।
।। আড়ালে ।।
- শঙ্খ ঘোষ
দুপুরে রুক্ষ গাছের পাতায়
কোমলতাগুলি হারালে
তোমাকে বক্ব, ভীষণ বক্ব
আড়ালে।
যখন যা চাই তখনি তা চাই
তা যদি না হবে তাহলে বাঁচাই
মিথ্যে, আমার সকল আশায়
নিওয়মেরা যদি নিয়ম শাসায়
দগ্ধ হাওয়ায় কৃপণ আঙুলে -
তাহলে শুকনো জীবনের মূলে
বিশ্বাস নেই, সে জীবনে ছাই
মেঘের করুণ কোমল দুপুর
সুর্য আঙুল বাড়ালে -
তোমাকে বক্ব, ভীষণ বক্ব
আড়ালে।।
।। ঈশ্বর আর প্রেমিকের সংলাপ ।।
- জয় গোস্মামী
- "সে যদি তোমাকে অগ্নিতে ফেলে মারে?"
বিনা চেষ্টায় মরে যাব একেবারে
- "সে যদি তোমাকে মেঘে দেয় উত্থান?"
বৃষ্টিতে, আমি বৃষ্টিতে খানখান
- "সে যদি তোমাকে পিষে করে ধূলোবালি?"
পথ থেকেপথে উড়ে উড়ে যাব খালি
- "উড়বে? - আচ্ছা, ছিঁড়ে দেয় যদি পাখা?"
পড়তে পড়তে ধরে নেব ওর শাখা
- "শাখা থেকে যদি নীচে ফেলে দেয় তোকে?"
কী আর করব, জড়িয়ে ধরব ওকেই
- বলো কী বলবে আদালত, কিছু বলবে কি এরপরও?
"যাও, আজীবন অশান্তি ভোগ করো!"
।। আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে ।।
- তারাপদ রায়
আমরা যে গাছটিকে কৃষ্ণচূড়া গাছ ভেবেছিলাম
যার উদ্দেশ্যে ধ্রূপদী বিন্যাসে কয়েক অনুচ্ছেদ প্রশস্তি লিখেছিলাম
গতকাল বলাই বাবু বললেন, 'ঐটি বাঁদরলাঠি গাছ'।
অ্যালসেশিয়ান ভেবে যে সারমেয় শাবকটিকে
আমরা তিন মাস বক্লস পরিয়ে মাংস খাওয়ালাম
ক্রমশ তার খেঁকিভাব প্রকট হয়ে উঠছে।
আমরা টের পাইনি
আমাদের ঝরণা কলম কবে ডট্ পেন হয়ে গেছে
আমাদের বড়বাবু কবে হেড অ্যসিস্ট্যান্ট হয়ে গেছেন
আমাদের বাবা কবে বাপি হয়ে গেছেন।
আমরা বুঝতে পারিনি
আমাদের কবে সর্বনাশ হয়ে গেছে।।
।। হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে ।।
- জয় গোস্মামী
অতল তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি ব'লে
হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে
করো আনন্দ আয়োজন ক'রে পড়ো
লিপি চিত্রিত লিপি আঁকাবাঁকা পাহাড়ের সানুতলে
যে একা ঘুরছে, তাকে খুঁজে বার করো
করেছো, অতল; করেছিলে; প'ড়ে হাত থেকে লিপিখানি
ভেসে যাচ্ছিল - ভেসে তো যেতোই , মনে না করিয়ে দিলে;
- 'প'ড়ে রইল যে!' পড়েই থাকত - সে - লেখা তুলবে ব'লে
কবি ডুবে মরে, কবি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে ।।
।। বসন্ত বন্দনা ।।
- নির্মলেন্দু গুন
হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্র-সঙ্গীতে যতো আছে,
হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে
বনের কুসুমগুলি ঘিরে । আকাশে মেলিয়া আঁখি
তবুও ফুটেছে জবা,–দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে,
তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্তপথিক ।
এলিয়ে পড়েছে হাওয়া, ত্বকে কী চঞ্চল শিহরণ,
মন যেন দুপুরের ঘূর্ণি-পাওয়া পাতা, ভালোবেসে
অনন্ত সঙ্গীত স্রোতে পাক খেয়ে মৃত্তিকার বুকে
নিমজ্জিত হতে চায় । হায় কী আনন্দ জাগানিয়া ।
এমন আগ্রাসী ঋতু থেকে যতোই ফেরাই চোখ,
যতোই এড়াতে চাই তাকে দেখি সে অনতিক্রম্য ।
বসন্ত কবির মতো রচে তার রম্য কাব্য খানি
নবীন পল্ববে, ফুলে ফুলে । বুঝি আমাকেও শেষে
গিলেছে এ খল-নারী আপাদমস্তক ভালোবেসে ।
আমি তাই লঘুচালে বন্দিলাম স্বরুপ তাহার,
সহজ অক্ষরবৃত্তে বাঙলার বসন্ত বাহার ।
।। ছন্দোরীতি ।।
- মহাদেব সাহা
তোমাদের কথায় কথায় এতো ব্যকরণ
তোমাদের উঠতে বসতে এতো অভিধান,
কিন্তু চঞ্চল ঝর্ণার কোনো ব্যাকরণ নেই
আকাশের কোনো অভিধান নেই, সমুদ্রের নেই।
ভালোবাসা ব্যাকরণ মানে না কখনো
হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনো সংবিধান নেই
হৃদয় যা পারে তা জাতিসঙ্ঘ পারে না
গোলাপ ফোটে না কোনো ব্যাকরণ বুঝে।
প্রেমিক কি ছন্দ পড়ে সম্বোধন করে?
নদী চিরছন্দময়, কিন্তু সে কি ছন্দ কিছু জানে,
পাখি গান করে কোন ব্যাকরণ মেনে?
তোমারাই বলো শুধু ব্যাকরণ, শুধু অভিধান!
বলো প্রেমের কি শুদ্ধ বই, শুদ্ধ ব্যাকরণ
কেউ কি কখনো সঠিক বানান খোঁজে প্রেমের চিঠিতে
কেউ কি জানতে চায় প্রেমালাপ স্বরে না মাত্রায়?
নীরব চুম্বনই জানি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ছন্দরীতি।
No comments:
Post a Comment