Saturday, 6 June 2020

কিছু কথা ৩

আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস।

আমরা, শিক্ষিত মানুষেরা বছরের বিভিন্ন দিন বিভিন্ন বিষয় বা বস্তু (নির্জীব ও সজীব দুই ই) র উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে থাকি। সেই বিশেষ দিনটিতে আমরা সেই বিশেষ বিষয় বা বস্তুটির সম্পর্কে গাল ভরা কথা বলি, গান গাই, কবিতা বলি, নানারকম অনুষ্ঠান করি…এক কথায় যাকে বলে ‘আদিখ্যেতা’ করি। কেন করি? কারন এভাবেই আমরা বোঝাই সেই সেই বিশেষ বিশেষ বিষয় বা বস্তু গুলো আমাদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ (হয়ত ভালোবাসার)। এবং বিশ্বাস করুন, আমাদের মত উন্নততম প্রজাতির পক্ষে নিজেকে ছাড়া বাকি কোনো কিছু বা কোনো কাউকেই ওই এক দিনের বেশি গুরুত্ব দেওয়া সম্ভব নয়। 

আজ সেই রকমই একটা বিশেষ দিন। আজ “পরিবেশের” আদিখ্যেতা পাওয়ার দিন। আজ আমরা, সাদা ক্যানভাসে কিছুটা ধূসর আর কিছুটা সবুজ রঙের প্রলেপ দিয়ে ছবি আঁকব, শ্যামল সুন্দর বলে গান গাইব, বলব “ওরে সবুজ ওরে অবুঝ, আধ্মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা…”, কিছু চারা গাছও পুঁতবো আশে পাশে রাস্তার ধারে… আর কেউ কেউ তো মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস পরে ঝাঁটা বালতি নিয়ে নেমে পরব রাস্তায়, পার্কে, সমূদ্র সৈকতে (যার যেখানে সুবিধা)।

 আজ, মনে রাখবেন শুধু আজ “পরিবেশ বাঁচাও” অভিযান হবে। কাল থেকে কিন্তু ভুলেও ভাববেন না যে আমরা আবার এই এক বিষয়ে সময় খরচ করব… যে গাছটা পুঁতেছি সেটায় জল দেব, যে রাস্তাটা ঝাঁট দিয়েছি সেটা পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করব… নাঃ দাদা! এসবের সময় নেই, কারন আগামী কাল বোধহয় অন্যকোনো কিছুর প্রাধান্য পাওয়ার দিন। 

আমার কথা শুনে ভাববেন না যেন আমি এসব বিশেষ বিশেষ দিন উদযাপনের বিরোধী। একেবারেই না। আমি “নেই মামার চেয়ে কানা মামা” কথাটাতে বিশ্বাস করে থাকি মাঝে মাঝে। আর তাছাড়া গীতায় বলাই তো আছে, “যাহা হচ্ছে ভালোই হচ্ছে”। সব ভালো আমি চর্ম চক্ষে দেখতে পাইনা সেটা আমার অপারোগতা।
 
যাইহোক যেকথায় ছিলাম , সেখানে ফিরে আসি। হ্যাঁ তো আজ সেই বিশেষ দিন! অন্যান্য দিনের কথা থাক, আজ যখন পরিবেশ দিবস পরিবেশ নিয়েই কথা বলি। অনেক বছর ধরেই এই দিনটা আমরা পালন করি। সবুজ পৃথিবীর স্বপ্ন আঁকি। আজ আমার কিছু কথা মনে এল, তাই বলছি। আচ্ছা, এই পরিবেশ কি শুধু প্রকৃতি কে বর্নণা করে? না তো। পরিবেশ এর বড় একটা অংশে আছি আমরা, উন্নততম প্রজাতিরা। আমাদের আচার, বিচার, ধ্যান ধারনা, আদব কায়দা, মনন চিন্তন এসব নিয়েও তো পরিবেশ তৈরী হয়। যে পরিবেশের সাথে জন্ম থেকে আমরা খুব বেশী ভাবে জড়িয়ে থাকি, সেটা কিন্তু শুধু মাত্র প্রকৃতির সবুজ নয়। তাছাড়া, সত্যিকারের সবুজ প্রকৃতিতে বাঁচতে পারব কি আমরা? নাকি আমরা আদেও প্রকৃতির সাথে সহাবস্থানে থাকা্র যোগ্য?! বরং আমরা বড়জোর আমদের মত করে আমাদের মনূষ্য ভাব ধারায় সবুজের প্রাধান্য বাড়াতে বা বজায় রাখতে পারি। সবুজ পরিবেশ মানে শুধু নীল আকাশ আর পাতা ভর্তি গাছ নয়, মানব জীবনের সজীবতাও সেই সবুজের অংশ। আর দুঃখের কথা, মানব প্রজাতি আর সজীব নেই। যান্ত্রিকতা, কৃত্তিমতা, পাশবিকতা , স্বার্থপরতা, ক্ষুদ্র মানসিকতা মানুষ প্রজাতি কে গ্রাস করেছে। মানুষ এখন মৃতপ্রায় এক জাতি - যে মরতে এবং মারতে উদ্গ্রীব। যার নিজের মান আর হুশ নেই সে আবার পরিবেশের কথা বলে! তাও যদি নিজের মানসিক সামাজিক পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা দেখাতো কথা ছিল! কিন্তু এ নির্লজ্জ জাতি আবার বিশ্বের পরিবেশ এবং প্রকৃতির কথা বলে! – প্রহসন!...

আমার একটাই বক্তব্য… প্রকৃতি নিজের খেয়াল নিজে খুব ভালোই রাখতে সক্ষম… বরং আমরা মানে শিক্ষিত উন্নত মানুষ জাতি, একটু নিজেদের সজীবতার খেয়াল রাখলেই তো পারি। আমরা মনে সুস্থ ভাবনা রাখলে প্রকৃতি এমনিতেই সুন্দর থাকবে। বিশ্বের পরিবেশের কথা না ভেবে নিজের চারপাশের (হ্যাঁ, নিজের ঘর বাড়ি, সম্পর্ক সবই) পরিবেশের কথাও তো ভাবতে পারি। কোনো এক বিশেষ দিন উদযাপণ করা ভালো কথা, বৃক্ষরোপণ সত্যিই বড় ভালো কাজ, কিন্তু সেই চারা গাছটা লাগানোর আগে জমি তৈরী করা ও গাছ লাগানোর পরে তাকে জল দেওয়াটাও তো ততটাই প্রয়োজনীয়। একদিন পরিবেশ পরিবেশ করে চেঁচিয়ে তো কিছু হবে না, আসুন না রোজ একটু একটু করে নিজের চিন্তা ভাবনা, আচার ব্যবহার সব কিছু দিয়ে সুস্থ সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলি… তারপর শুধু go green কেনো দাদা, রামধনুর সাত রঙ এ মিশে যান না, ক্ষতি কি, রামধনুও তো পরিবেশেরই অংশ।

No comments:

Post a Comment