Saturday, 6 June 2020

কিছু কথা ২

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হল, আজ মে মাস শেষ হয়ে গেল। অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল শেষের পথে। আর কিছুদিন পর বর্ষা আসবে। খবরে বলছে কেরালায়  বর্ষা নাকি ঢুকে গেছে, সুতরাং আমরা, মানে বঙ্গবাসীর প্রতীক্ষা আর বেশি দিনের নয়। ক্যালেন্ডার বলছে বছরটা অর্ধেক শেষ হয়ে গেছে। বিগত বছর গুলো তে এই সময় কি হয়? - স্কুল কলেজে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর তোড়জোড় হয়। কাজের যায়গায় নতুন অর্থবর্ষের নতুন কাজকর্মের পরিকল্পনা শুরু হয়ে যায়। পয়লা বৈশাখ,  পঁচিশে বৈশাখ চলে গিয়ে এখন বনমহৎসবের তৈয়ারির সময়। আর দুর্গাপূজার পরিকল্পনাও তো শুরু হওয়ার কথা। 
কিন্তু এবছর টায় এসব কিছুই ঠিক হয়ে উঠছে না। ইংরেজি মতে বছরটা শুরু করেছিলাম বিগত অন্যান্য বছরের মতই। নিউ ইয়ার রেজোলিউশনের লিস্ট করে, চেনা অচেনা মানুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেচে গেয়ে, হইহই করে। কিন্তু তারপর সব কিছু  পাল্টাতে শুরু করল। হঠাৎ করে জীবনযাত্রায় বিধি নিষেধের ব্যবস্থা বেড়ে গেল, দৈনন্দিন অভ্যাস গুলো তে ছুরি কাঁচি চলল। অচেনা তো কোন ছাড় চেনা জানা কাছের মানুষদেরও যতটা সম্ভব দূরে সরিয়ে রাখতে হল। নতুন বছরের সমস্ত রকমের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স্থগিত রাখা, শুরু হল, তারপর বাতিল করা এবং ধীরে ধীরে পরিবর্তন করার কথা ভাবা শুরু হল। এবং এত কিছু শুধু মাত্র ভালো থাকার ও ভালো রাখার কথা ভেবে।
প্রথম প্রথম ভেবেছিলাম দুদিনের বা দুমাসের এই বিপদ,  এই প্রতিকূলতা,  এই বিপর্যয়, এই অনিশ্চয়তা। কিন্তু আজ বুঝতে পারছি দুদিন দুদিন করে অর্ধেক বছর কেটে গেছে কিন্তু পরিস্থিতি খুব একটা সুবিধের বা অনুকূল হয়নি। সুতরাং এই ঘেরাটোপ,  বিধিনিষেধ, দূর্যোগ এখন নিত্য সঙ্গী অনির্দিষ্টকালের জন্য।  এবং  যে মানুষ একে অপরের খুব কাছাকাছি পাশাপাশি ঘন হয়ে বাঁচতে অভ্যস্ত তাকে শুধু মাত্র সুস্থ শরীরে বেঁচে থাকার নামেই বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতন দূরে দূরে থাকতে হবে আগামী কত দিন - জানা নেই। আমাদের চেনা জানা জীবনযাপনের অনেক কিছুই জানা নেই আর। এবং যতই অস্বস্তি হোকনা কেন এই অজানা জীবনটাই এই বছরে আমাদের প্রাপ্তি। 

কিছুক্ষণের জন্য মনে হচ্ছিল আমি এক হতাশ ধ্বংসের দিনের দিকে তাকিয়ে আছি যেন। তখনি আমার বাড়ির নীচে ফেরিওয়ালার ডাক শুনতে পেলাম। ব্যাপার টা নতুন বা আশ্চর্যজনক কিছু নয়। তবে গত কিছুটা সময়ের স্তব্ধতার পর এই হাঁক ডাক গুলো শুনলে এখন মনে হচ্ছে, "প্রাণ আছে, এখনো প্রাণ আছে।  প্রাণ থাকলেই মান আছে, স্থান আছে, সমস্ত বাধানিষেধের বাইরেও আছে অস্থিত্বের অধিকার ।"
ফেরিওয়ালার দিকে চোখ গেল, এবার অবাক হওয়ার পালা। সবজি, ফল, ফুল, মশলাপাতি, মাছ থেকে শুরু করে তুলোওয়ালা, ব্যাগের চেন শেলাই, ছাতা বা জুতো সেলাই, বেলুন, আইসক্রিম আরো কত কি তো আগেই দেখেছি, আজ দেখি মুখের মাস্ক, সিল্ড,হাতের গ্লাভস নিয়ে পসরা সাজিয়েছে এই ফেরিওয়ালা। 
মনে হল এইতো কেমন খাপ খাইয়ে নিচ্ছে জীবন! খাপ খাইয়ে নিচ্ছে সবাই নানা ভাবে মুখ ঢেকে দূরে সরে থেকে। জীবনধারণের ব্যকরণে পরিবর্তন আসছে, টিকে থাকার লড়াই এর ধরণ বদলাচ্ছে। ভালোবাসার পরিভাষা পাল্টাচ্ছে।  স্বপ্ন গুলোও অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে আর স্বপ্নের ফেরিওয়ালারা একই ভাবে বেঁচে থাকার আশ্বাস বিক্রি করে চলেছে শহরের রাস্তায়।

No comments:

Post a Comment