Wednesday, 26 December 2018

কথা ছিল ঝরে যাওয়ার।
তাই ঠিক সময় মত গুছিয়ে নিয়েছিলে সব।
 মুখ চোখের মলিন ভাবটা যেন একটু বেশি তীব্র করে ফেলেছিলে,
সে যাক গে, মানিয়েছিল ভালো।
তোমার ঘরের ওই শেষ হয়ে আসা মোমবাতিটা,
গায়ে তোমার হালকা নেই নেই গন্ধ..
সব মিলিয়ে বেশ একটা উদাসীন দূরত্ব তৈরি করে ফেলেছিলে চারপাশে, ঠিক যেমনটা কথা ছিল।
সবই তো ঠিক ছিল, তবে চোখে কেন জল এল?
ঝরে পড়ার আগে, ঠিক আগে, হাতের বাঁধনটা শক্ত হল কেন?
কেন তবে মনে হল শেষ হতে এখনও তো সময় ঢের বাকি।
মাথাটা ভারী হয়ে আসে,
এভাবেই তো চলে যায়, এরকমই তো কথা ছিল।
তোমার ঝরে যাওয়া দেখতে দেখতে, তবু একবার বলেছিলাম - 'যেও না'।
নাঃ, এরকমটা কথা ছিল না।

Tuesday, 9 October 2018

পরিণত হচ্ছে  মন।
পরিণত হচ্ছে চিন্তা।
মাথার চুলে ধরছে পাক।
আর মুখে স্পষ্ট বয়সের ছাপ।

এখন কথাবার্তা অনেক সোজাসাপ্টা,
একটু ঝাঁঝালো যেন।
আবার কখনও নির্লিপ্ত, নিরুত্তাপ বা নির্বিকার।
আসলে পরিণত হচ্ছে মেজাজ।
শৌখিন খোলস খুলবে এবার।

পরিণত এখন সৌন্দর্য বোধ।
পরিণত সব সাধ আহ্লাদ, জমিয়ে রাখা শখ।
সময় পরিণত হল মানুষ বৃদ্ধ হওয়ার পর।
বহু কাল ধরে বহু দেশ ঘুরে স্থিতু হল যাযাবর।
এবার ইতিহাস ধূলো মেখে মেঘ হয়ে যাক।
পরিণত শরীরে বার্ধক্য এল যদি
এ সভ্যতাও তবে পরিণতি পাক।।


Monday, 8 October 2018

শেষটা হঠাৎ আসুক।
যেন মুখে লেগে থাকা স্বাদ,
গায়ে লেগে থাকা ছোঁয়া।
হুট করে যবনিকা পতন
ক্ষিদেটা যেমন বাড়িয়ে দেয় বাকিটার জন্য।
না দেখা, না জানা, না শোনা গুলো  কেমন
দলা পাকিয়ে থাকে বুকের কাছে,
শেষটা শেষের মত না হলে।
জড়িয়ে ধরার জন্য বাড়ানো হাত,
কাছে আসবে বলে এগোনো পা, আর
ভালোবাসবে বলে আলতো ঠোঁট দুটো
থমকে যায় যদি হঠাৎ,
যদি উপন্যাস লিখতে গিয়ে জীবনের
ছোটো গল্প লিখে ফেলে কেউ,
শেষটায় যদি শেষ কথাগুলো
বলে ফেলা না যায়,
তবে একটু ভালোই হয়।
একটা আফসোসের সুর সারা শরীরের রক্তে
চুঁইয়ে চুঁইয়ে বইতে থাকে।
শেষটা যদি দমকা হাওয়ায় এসে
উড়িয়ে দেয় সব, তবে মাথার ভেতর
সময়ের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদী মিছিল আয়োজন করা যায়।
একটা বিষাদের রঙ লেপে দেওয়া যায়
পৃথিবীর ধূসর বিবর্ণতায়।
আকষ্মিকতার স্মৃতিতে সুখের ছাপ থাকে।
সেই সুখের ভাপে আরাম প্রিয় হচ্ছে মন।
শেষটা বরং হঠাৎ করেই আসুক ।
সারাদিন ধরে একটানা চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়া  চিউইং গামের মত
তোমার বিস্বাদ চোখের দিকে চেয়ে চেয়ে
আমার শেষটাকে আমি যন্ত্রনার করে যেতে চাই না।।

Wednesday, 3 October 2018

।। আদিখ্যেতা ।।

চোখের নীচে কালি
ও যে থই হারালে সই
জ্বলবি তবু পুড়বি না।।

নীলচে কাঁচের ঘুম
আর হাড় মরমর রোগ
খাবি খাবি তবু গিলবি না।।

একটা হালকা রেশম ঝাঁপি
তাতে আলগা সুতোর জোট
বৃষ্টি পড়বে তবু ভিজবি না।।

ওটা ইচ্ছেডানার পাখি
আছে বারান্দাটার টোপ
ডানা মেলবে তবু উড়বে না।।

এ এক আজব খেলাঘর
তোর রথের চাকা কই?
মাটি মাখবি খালি, কিছু গড়বি না?..

Wednesday, 12 September 2018

- বললে না তো  কেমন লাগছে?

- এতে আর আলাদা করে বলার কি আছে।তুমি তো জানো তুমি সুন্দর।

- তবু  ইচ্ছে করে  তোমার মুখে শুনতে। তুমি কেমন অন্যরকম করে বল।

- অন্যরকম কেন!.. সুন্দর  কে তো  সুন্দরের মত করেই বলা চলে।... সুন্দর  তো কালো পাহাড়ের বুকে থাকা সেই মেয়েটা... যে সবুজ শাড়ি  পরে, তার নীল পাড় ঝরনার জল হয়ে ধুয়ে যায়..অগোছালো.. সেই মেয়েটা গায়ে মাখে অনামি বনফুল আর চুলে জড়িয়ে রাখে এলোমেলো মেঘ। সুন্দর তো  ওরা দুজনে.. যখন  একসাথে বৃষ্টি ভেজে, সারা রাত তারা মাখে শরীরে...  সুন্দর  তো  ওদের একসাথে বেঁচে থাকায়..
একে তুমি অন্যরকম বল?

- বলি, কারন তুমি শহুরে নও, বড্ড বেশি বন-বাদারে... তোমার কথায় কেমন জলে ভেজা পাথুরে গন্ধ, গলায় জঙ্গলের সুর। তাই তুমি অন্যরকম, তোমার সুন্দর অন্যরকম।

- বেশ। তবে একটা ব্যপার লক্ষণীয়, তুমিও হয়ত একটু করে অন্যরকম  হয়ে যাচ্ছ। ঠিক আগের মত কংক্রিটের গন্ধটা পাচ্ছি না তোমার গায়ে।

- সেই জন্যই তো জানতে চাওয়া, কেমন সুন্দর লাগছে। তুমি বললে, মিলেয়ে নিতে পারি আর কতটা বাকি আমাদের একরকম হতে।

- কি দরকার এক হয়ে, এই তো বেশ আছি।

- দরকার কিছু আছে হয়ত।
শোনো, এবার থেকে একটু বেশি করে  রোদের মধ্যে কাজ কোরো তো আর সঙ্গে ছাতা নেবে না কিন্তু। এদিকে আমিও খুঁজি সেই নীল পেড়ে সবুজ  শাড়ি...

Wednesday, 5 September 2018

।। শারদীয় ।।

আজ আকাশটা খুব নীচে নেমে এসেছে।
মেঘ গুলোকে যেন হাত বাড়ালেই ধরা যাবে।
আজ হাওয়া বইছে দক্ষিণ দিক থেকে।
যেন পাখা মেললেই উড়ে যেতে পারব নীলে।

আজ যেন মনে পড়ছে
আমার আগের জন্মের কথা।
যেন, এমনি এক শরৎকালের সকালে
শেষবার দেখা হয়েছিল আমাদের।
এক সাজি স্থলপদ্ম  হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম
তোমার অপেক্ষায় সেই চেনা নদীটার পারে,
সেই চেনা গাছটার নীচে।
তুমি এলে বাঁশির সুরে নৌকা বেয়ে।
গলায় পরালে সাদা শিউলি মালা।
বললে, এখন  সময় নেই আর দুটো কথা বলার,
বরং দেখা হবে অন্য কোনোদিন।
চলে গেলে ভাটিয়ালী বেয়ে সাগরের দিকে।

আজ সকালে সেই চেনা শারদীয় সুর।
হাওয়ায় সেই চেনা ফুলের গন্ধ।
আজ যেন মেঘের ডিঙায় তুমি এসেছ
আমার গত জন্মের ফেলে আসা ডাক বয়ে।

কিন্তু আমার  শিউলিতো এখনো ফোটেনি।
হয়ত আবার দেখা হবে অন্য কোনোদিন,
অন্য কোনোখানে।।

Tuesday, 7 August 2018

একফালি চাঁদ রাত্রি হবি?
তারা মাখবো শরীর জুড়ে।
পরিচিত মুখের ভিড়ে,
শুধুমাত্র  আমার হবি?
ভালোবাসব নিজের করে।।

রাত ফুরোবে সকাল হবে
কাজের পিঠে দিন গড়াবে।
শুকনো খোলার বাদাম ভাজা,
শীতের দিনের ছুটি হবি?
গড়ের মাঠের রোদ কুড়াবো আঁজলা ভরে।
স্বপ্ন জুড়ে আমার হবি?
কাব্য করে রাখব তুলে মনের ঘরে।

অঙ্ক ভুলের শাস্তি হবি?
হিসেব কষা রুপকথাদের ফেলবো ঝেড়ে।
দুঃখ সুখের চেনা পাড়ায়
শুধুমাত্র আমার হবি?
ভালোবাসব নিজের করে।।

Thursday, 2 August 2018


সেই পুরনো নীলচে সাদা আকাশ
একটা বিবর্ন চীৎকার
গভীর রাতের কোলে স্বপ্ন ভাঙে ঘুম
জীবন, বল দেখি তুই কার?

হলুদ শাড়ির ছাদ
দূরে সানাই ডাকা ভোর
কোকিল অকাল ফাগুন চুরি করে
বিষন্নতা, স্যাঙাত কোথায় তোর?

একটা অভিমানী মুখ ভার
লুকিয়ে মোছা চোখ উপচে জল
অকারনে বৃষ্টি ভেজে নকল ফুলের গাছ
ভুল পঞ্জিকা মিলিয়ে, জীবন,
এবার please প্রেমের কথা বল।।

Friday, 13 July 2018

        ।।আমার উতল হাওয়া।।

জানি তুই আসবি বলেই ঝড় পাঠালি।
উড়িয়ে দিলি এদিক ওদিক দৈনন্দিন।
জানি ভালোবাসবি বলেই বৃষ্টি হলি।
সোঁদা মাটির গন্ধ দিলি আঁচল জুড়ে।
ব্জ্রপাতের আঘাতটুকু বাঁচিয়ে এবার
কপাল ছুঁয়ে চিবুক ছুঁয়ে কাল বোশেখী
আষাঢ় শ্রাবণ ভিজিয়ে দিলি খেলার ছলে।
জানি তো কাছে থাকবি বলেই মেঘ মাখলি।
বছর জুড়ে অপেক্ষাতে
আমাদের কয়েকটা দিন বর্ষাকালীন।।

Sunday, 4 February 2018

।। ধোঁয়াশা।।

সাদা তুলোর মেঘের ভেলায়
সূর্য্যি মামা দিব্যি ভাসে,
তবু আকাশ আমার নীল হয়না।
শালিখ, দোয়েল, বুলবুলিতে
বাগান জুড়ে কিচিরমিচির,
তবু পাখি আমার শঙ্খচিল হয়না।

আকাশখানা নীল হয়না।।

পলাশ, শিমুল বসন্তময়,
কিন্তু আমার ফাগুন লাল হয়না।
শহর ভেজে বর্ষা জলে,
তবে মনের মাঝের ঝিল হয়না।

আকাশ আমার নীল হয়না।।

নিয়ম মাফিক  জোয়ার ভাঁটা রোজই খেলে,
কিন্তু কোথায় সাগর আর কোথায় নদী!
গাঙের জলে কোনো ঢেউ হয়না।
দুই পক্ষের নামাবলিতে
পূর্ণিমাচাঁদ দিব্যি হাসে,
শুধু রোজনামচার অজুহাতে প্রেম হয়না।

তোকে ছাড়া কাব্যে অন্তমিল হয়না।
তাইতো আমার আকাশটা আর নীল হয়না।।