তাকাবো না বলেই যেন বহু ব্যস্ততা
সাজিয়ে রেখেছি চোখের সামনে।
চেনা জানা কাজ, অকাজ,
এমনকি পরিকল্পিত নেই কাজ তো খই ভাজ।
মনে হয় আজও চোখে চোখ পড়লে যেন
ছলকে পড়বে প্রেম,
যেন কথায় মিলে যাবে কথা।
হোঁচট খাওয়া ইচ্ছে গুলো যদি হঠাৎ
রাজপথে নেমে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে,
তবে এই জঙ ধরা হাড়ে নাস্তানাবুদ হওয়া ছাড়া গতি নেই।
এর চেয়ে ঢেড় ভালো স্বল্প বাক্যে এড়িয়ে যাওয়া।
আমাদের কোনো খালি জমি নেইতো , বাগান করার মত।
দামি দামি আশা জমিয়ে রাখার জন্য
নেই কোনো ভারী সিন্দুকও।
বরং আজ রোদ চশমা আড়াল করে দাঁড়াক দৃষ্টি পথে।
রঙিন কাঁচে ঘোলাটে প্রেম - হলুদ, সবুজ, লাল অথবা কালো,
ঈষৎ বেঁকে ঘাড় ঘুরিয়ে আড় চোখে হোক কুশল বিনিময়,
থাক তবে আজ, সরাসরি না তাকানোই ভালো।।
Friday, 4 December 2020
Sunday, 6 September 2020
বৃষ্টি বিদায়
মুখ মুখোশের আড়ালে সময় বয়ে যায় ।
টুকরো টুকরো জীবন, নাকি অলিখিত ইতিহাস!
কারা যেন বলে গেল, 'বাঁচতে হয় তো বাঁচার মত বাঁচো।'
তবু কিছু লোক স্মৃতি তৈরির কারখানায় বেঘোরে মারা পড়ে বিস্মৃতির দিনলিপি বুকে।
স্বপ্ন নিষ্ঠুর বড়, সময়ের গায়ে অকারণে
বাসন্তী গন্ধ মাখায়।
ছেঁড়া মেঘে ভালোবাসা জমে, নাকি আকাশের পরিহাস!
Saturday, 6 June 2020
কিছু কথা ৩
আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস।
আমরা, শিক্ষিত মানুষেরা বছরের বিভিন্ন দিন বিভিন্ন বিষয় বা বস্তু (নির্জীব ও সজীব দুই ই) র উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে থাকি। সেই বিশেষ দিনটিতে আমরা সেই বিশেষ বিষয় বা বস্তুটির সম্পর্কে গাল ভরা কথা বলি, গান গাই, কবিতা বলি, নানারকম অনুষ্ঠান করি…এক কথায় যাকে বলে ‘আদিখ্যেতা’ করি। কেন করি? কারন এভাবেই আমরা বোঝাই সেই সেই বিশেষ বিশেষ বিষয় বা বস্তু গুলো আমাদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ (হয়ত ভালোবাসার)। এবং বিশ্বাস করুন, আমাদের মত উন্নততম প্রজাতির পক্ষে নিজেকে ছাড়া বাকি কোনো কিছু বা কোনো কাউকেই ওই এক দিনের বেশি গুরুত্ব দেওয়া সম্ভব নয়।
আজ সেই রকমই একটা বিশেষ দিন। আজ “পরিবেশের” আদিখ্যেতা পাওয়ার দিন। আজ আমরা, সাদা ক্যানভাসে কিছুটা ধূসর আর কিছুটা সবুজ রঙের প্রলেপ দিয়ে ছবি আঁকব, শ্যামল সুন্দর বলে গান গাইব, বলব “ওরে সবুজ ওরে অবুঝ, আধ্মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা…”, কিছু চারা গাছও পুঁতবো আশে পাশে রাস্তার ধারে… আর কেউ কেউ তো মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস পরে ঝাঁটা বালতি নিয়ে নেমে পরব রাস্তায়, পার্কে, সমূদ্র সৈকতে (যার যেখানে সুবিধা)।
আজ, মনে রাখবেন শুধু আজ “পরিবেশ বাঁচাও” অভিযান হবে। কাল থেকে কিন্তু ভুলেও ভাববেন না যে আমরা আবার এই এক বিষয়ে সময় খরচ করব… যে গাছটা পুঁতেছি সেটায় জল দেব, যে রাস্তাটা ঝাঁট দিয়েছি সেটা পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করব… নাঃ দাদা! এসবের সময় নেই, কারন আগামী কাল বোধহয় অন্যকোনো কিছুর প্রাধান্য পাওয়ার দিন।
আমার কথা শুনে ভাববেন না যেন আমি এসব বিশেষ বিশেষ দিন উদযাপনের বিরোধী। একেবারেই না। আমি “নেই মামার চেয়ে কানা মামা” কথাটাতে বিশ্বাস করে থাকি মাঝে মাঝে। আর তাছাড়া গীতায় বলাই তো আছে, “যাহা হচ্ছে ভালোই হচ্ছে”। সব ভালো আমি চর্ম চক্ষে দেখতে পাইনা সেটা আমার অপারোগতা।
যাইহোক যেকথায় ছিলাম , সেখানে ফিরে আসি। হ্যাঁ তো আজ সেই বিশেষ দিন! অন্যান্য দিনের কথা থাক, আজ যখন পরিবেশ দিবস পরিবেশ নিয়েই কথা বলি। অনেক বছর ধরেই এই দিনটা আমরা পালন করি। সবুজ পৃথিবীর স্বপ্ন আঁকি। আজ আমার কিছু কথা মনে এল, তাই বলছি। আচ্ছা, এই পরিবেশ কি শুধু প্রকৃতি কে বর্নণা করে? না তো। পরিবেশ এর বড় একটা অংশে আছি আমরা, উন্নততম প্রজাতিরা। আমাদের আচার, বিচার, ধ্যান ধারনা, আদব কায়দা, মনন চিন্তন এসব নিয়েও তো পরিবেশ তৈরী হয়। যে পরিবেশের সাথে জন্ম থেকে আমরা খুব বেশী ভাবে জড়িয়ে থাকি, সেটা কিন্তু শুধু মাত্র প্রকৃতির সবুজ নয়। তাছাড়া, সত্যিকারের সবুজ প্রকৃতিতে বাঁচতে পারব কি আমরা? নাকি আমরা আদেও প্রকৃতির সাথে সহাবস্থানে থাকা্র যোগ্য?! বরং আমরা বড়জোর আমদের মত করে আমাদের মনূষ্য ভাব ধারায় সবুজের প্রাধান্য বাড়াতে বা বজায় রাখতে পারি। সবুজ পরিবেশ মানে শুধু নীল আকাশ আর পাতা ভর্তি গাছ নয়, মানব জীবনের সজীবতাও সেই সবুজের অংশ। আর দুঃখের কথা, মানব প্রজাতি আর সজীব নেই। যান্ত্রিকতা, কৃত্তিমতা, পাশবিকতা , স্বার্থপরতা, ক্ষুদ্র মানসিকতা মানুষ প্রজাতি কে গ্রাস করেছে। মানুষ এখন মৃতপ্রায় এক জাতি - যে মরতে এবং মারতে উদ্গ্রীব। যার নিজের মান আর হুশ নেই সে আবার পরিবেশের কথা বলে! তাও যদি নিজের মানসিক সামাজিক পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা দেখাতো কথা ছিল! কিন্তু এ নির্লজ্জ জাতি আবার বিশ্বের পরিবেশ এবং প্রকৃতির কথা বলে! – প্রহসন!...
আমার একটাই বক্তব্য… প্রকৃতি নিজের খেয়াল নিজে খুব ভালোই রাখতে সক্ষম… বরং আমরা মানে শিক্ষিত উন্নত মানুষ জাতি, একটু নিজেদের সজীবতার খেয়াল রাখলেই তো পারি। আমরা মনে সুস্থ ভাবনা রাখলে প্রকৃতি এমনিতেই সুন্দর থাকবে। বিশ্বের পরিবেশের কথা না ভেবে নিজের চারপাশের (হ্যাঁ, নিজের ঘর বাড়ি, সম্পর্ক সবই) পরিবেশের কথাও তো ভাবতে পারি। কোনো এক বিশেষ দিন উদযাপণ করা ভালো কথা, বৃক্ষরোপণ সত্যিই বড় ভালো কাজ, কিন্তু সেই চারা গাছটা লাগানোর আগে জমি তৈরী করা ও গাছ লাগানোর পরে তাকে জল দেওয়াটাও তো ততটাই প্রয়োজনীয়। একদিন পরিবেশ পরিবেশ করে চেঁচিয়ে তো কিছু হবে না, আসুন না রোজ একটু একটু করে নিজের চিন্তা ভাবনা, আচার ব্যবহার সব কিছু দিয়ে সুস্থ সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলি… তারপর শুধু go green কেনো দাদা, রামধনুর সাত রঙ এ মিশে যান না, ক্ষতি কি, রামধনুও তো পরিবেশেরই অংশ।
কিছু কথা ২
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হল, আজ মে মাস শেষ হয়ে গেল। অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল শেষের পথে। আর কিছুদিন পর বর্ষা আসবে। খবরে বলছে কেরালায় বর্ষা নাকি ঢুকে গেছে, সুতরাং আমরা, মানে বঙ্গবাসীর প্রতীক্ষা আর বেশি দিনের নয়। ক্যালেন্ডার বলছে বছরটা অর্ধেক শেষ হয়ে গেছে। বিগত বছর গুলো তে এই সময় কি হয়? - স্কুল কলেজে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর তোড়জোড় হয়। কাজের যায়গায় নতুন অর্থবর্ষের নতুন কাজকর্মের পরিকল্পনা শুরু হয়ে যায়। পয়লা বৈশাখ, পঁচিশে বৈশাখ চলে গিয়ে এখন বনমহৎসবের তৈয়ারির সময়। আর দুর্গাপূজার পরিকল্পনাও তো শুরু হওয়ার কথা।
কিন্তু এবছর টায় এসব কিছুই ঠিক হয়ে উঠছে না। ইংরেজি মতে বছরটা শুরু করেছিলাম বিগত অন্যান্য বছরের মতই। নিউ ইয়ার রেজোলিউশনের লিস্ট করে, চেনা অচেনা মানুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেচে গেয়ে, হইহই করে। কিন্তু তারপর সব কিছু পাল্টাতে শুরু করল। হঠাৎ করে জীবনযাত্রায় বিধি নিষেধের ব্যবস্থা বেড়ে গেল, দৈনন্দিন অভ্যাস গুলো তে ছুরি কাঁচি চলল। অচেনা তো কোন ছাড় চেনা জানা কাছের মানুষদেরও যতটা সম্ভব দূরে সরিয়ে রাখতে হল। নতুন বছরের সমস্ত রকমের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স্থগিত রাখা, শুরু হল, তারপর বাতিল করা এবং ধীরে ধীরে পরিবর্তন করার কথা ভাবা শুরু হল। এবং এত কিছু শুধু মাত্র ভালো থাকার ও ভালো রাখার কথা ভেবে।
প্রথম প্রথম ভেবেছিলাম দুদিনের বা দুমাসের এই বিপদ, এই প্রতিকূলতা, এই বিপর্যয়, এই অনিশ্চয়তা। কিন্তু আজ বুঝতে পারছি দুদিন দুদিন করে অর্ধেক বছর কেটে গেছে কিন্তু পরিস্থিতি খুব একটা সুবিধের বা অনুকূল হয়নি। সুতরাং এই ঘেরাটোপ, বিধিনিষেধ, দূর্যোগ এখন নিত্য সঙ্গী অনির্দিষ্টকালের জন্য। এবং যে মানুষ একে অপরের খুব কাছাকাছি পাশাপাশি ঘন হয়ে বাঁচতে অভ্যস্ত তাকে শুধু মাত্র সুস্থ শরীরে বেঁচে থাকার নামেই বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতন দূরে দূরে থাকতে হবে আগামী কত দিন - জানা নেই। আমাদের চেনা জানা জীবনযাপনের অনেক কিছুই জানা নেই আর। এবং যতই অস্বস্তি হোকনা কেন এই অজানা জীবনটাই এই বছরে আমাদের প্রাপ্তি।
কিছুক্ষণের জন্য মনে হচ্ছিল আমি এক হতাশ ধ্বংসের দিনের দিকে তাকিয়ে আছি যেন। তখনি আমার বাড়ির নীচে ফেরিওয়ালার ডাক শুনতে পেলাম। ব্যাপার টা নতুন বা আশ্চর্যজনক কিছু নয়। তবে গত কিছুটা সময়ের স্তব্ধতার পর এই হাঁক ডাক গুলো শুনলে এখন মনে হচ্ছে, "প্রাণ আছে, এখনো প্রাণ আছে। প্রাণ থাকলেই মান আছে, স্থান আছে, সমস্ত বাধানিষেধের বাইরেও আছে অস্থিত্বের অধিকার ।"
ফেরিওয়ালার দিকে চোখ গেল, এবার অবাক হওয়ার পালা। সবজি, ফল, ফুল, মশলাপাতি, মাছ থেকে শুরু করে তুলোওয়ালা, ব্যাগের চেন শেলাই, ছাতা বা জুতো সেলাই, বেলুন, আইসক্রিম আরো কত কি তো আগেই দেখেছি, আজ দেখি মুখের মাস্ক, সিল্ড,হাতের গ্লাভস নিয়ে পসরা সাজিয়েছে এই ফেরিওয়ালা।
মনে হল এইতো কেমন খাপ খাইয়ে নিচ্ছে জীবন! খাপ খাইয়ে নিচ্ছে সবাই নানা ভাবে মুখ ঢেকে দূরে সরে থেকে। জীবনধারণের ব্যকরণে পরিবর্তন আসছে, টিকে থাকার লড়াই এর ধরণ বদলাচ্ছে। ভালোবাসার পরিভাষা পাল্টাচ্ছে। স্বপ্ন গুলোও অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে আর স্বপ্নের ফেরিওয়ালারা একই ভাবে বেঁচে থাকার আশ্বাস বিক্রি করে চলেছে শহরের রাস্তায়।
কিছু কথা ১
আমি চিরকাল নিজেকে privileged, সৌভাগ্যবতীই ভাবি, ভাবি আমার জীবন সে যেরকমই হোক ভগবানের আশীর্বাদ ছাড়া আর কিছুই নয়। তবু ইদানীং যখন চারপাশে তাকাই, সেই ভগবানকে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে, মনে হয় বলি," তোমার পায়ে মাথা খুঁড়ছি, দয়া করে বল আমায় privilege দিচ্ছ কেন, কি করাতে চাও আমাকে দিয়ে, কার কাছে, কিভাবে পৌঁছাতে হবে আমায়, দয়া করে বলে দাও।" আমার অক্ষমতা আমি জানি, পৃথিবীর কথা, জনগণের কথা ছেড়েই দিলাম, আমি আমার খুব কাছের, ভালোবাসার মানুষ গুলোর কাছে ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারিনা, তাদের হাত ধরে বলার সুযোগ পাই না 'আমি আছি'। অসহায় লাগে খুব।
কি করতে পারি আমি, কি আছে আমার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার, শত্রুর সামনে বুক চিতেয়ে দাঁড়ানোর মত অস্ত্র, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মত স্বান্তনা, অর্থ...
কি আছে? না, ভেবে দেখতে গেলে সত্যি কথা বলতে নেই কিচ্ছু নেই।
মাঝে মাঝে গলা ছেড়ে বলতে ইচ্ছা করে, "আমার জনম গেল বৃথা কাজে, আমি কাটানু দিন ঘরের মাঝে, তুমি বৃথা আমায় শক্তি দিলে শক্তি দাতা"!..
আর মাঝে মাঝে এও মনে হয় আমার একটা অসুখ আছে। বোবা হয়ে যাওয়ার অসুখ। এই বোবা হয়ে যাওয়াটা খুব অস্বাভাবিক ধরনের। ঠিক যখন বুকের ভেতরটা ফেটে যায় কান্নায়, চিৎকারে বা হাসিতে হ্যাঁ হাসিতেও, তখনই মনে হয় গলাটা বুঝি কেউ শক্ত হাতে চেপে ধরেছে, বা মাথার মধ্যে যেখানে শব্দরা, কথারা জমা থাকে সেই যায়গাটা কেউ ঝাঁট দিয়ে সাফ করে দিয়েছে তাই একটা কথাও বেড়োয় না, না মুখের ডগায় না পেনের ডগায়।
আনন্দে মাতোয়ারা হওয়ার, রাগে ফেটে পড়ার, দুঃখে ভেঙে পড়ার, ভাষা আসে না আমার। বিপ্লব করার মত, উদ্বুদ্ধ করার মত এমনকি স্বান্তনা দেওয়ার মত ভাষাও নেই আমার।
নিজের এই বোবা হয়ে যাওয়াটা যে কি কষ্টকর সে শুধু আমিই জানি।
জানা নেই কি হচ্ছে বা কি হবে। কিছু বলারও ভাষা নেই। শুধু প্রার্থনা তাঁর কাছে, যিনি সব জানেন, সকলের পাশে দাঁড়ান, সব কিছু করেন ও করান, "আমাকে দিয়ে যা করানোর করিয়ে নিও।"
Sunday, 26 April 2020
কোনো এক দ্বিপ্রাহরিক ব্যাস্ততাকে পাশ কাটিয়ে
শহুরে পথে গোলাপ বিক্রি হতেই পারে।
মেঘলা আকাশ খোলা ছাদে অঝোর মনে
সন্ধ্যে মাখা শৌখিনতা হতেই পারে।
হতেই পারে দেবদারু গাছ, নতুন পাতা
সবুজে সবুজ অভিসারিকা।
হতেই পারে একটুখানি আশকারা ভাব চারপাশের হাওয়ায় ছিল।
তাই দামী কোনো সুগন্ধিকে হার মানিয়ে
গায়ে একটা আদর মাখা গন্ধ ছিল।
ঠোঁটের ওপর কালশিটেটা স্পষ্ট ছিল।
জিভে যেন নোনতা মেজাজ আলগা ছিল।
শার্টের বোতাম বুকের কাছে খোলাই ছিল।
আর এলো খোঁপার কাঁটায় গাঁথা
স্বপ্নে মোড়া তারা ছিল,
সেইদিনকে গায়ে একটা আদর মাখা গন্ধ ছিল।।
Monday, 20 April 2020
সুখ - শাড়ী কথা
একটা শাড়ী দিও আমায়?
ঘন নীল তার জমি আর সোনালী জরি বোনা সরু তার সীমানা।
সুতি না রেশম?- সে তোমার যা খুশি,
শুধু খেয়াল রেখো, শাড়ীটা গায়ে দিয়ে যেন আমার তোমায় মনে পড়ে।
প্রথম প্রথম যত্নে রাখব তুলে, কথা দিচ্ছি।
পরিপাটি হবে প্রতিটা ভাঁজ, শাড়ীর সাথে একটু বেশি সাজ।
শুধু সখের অনুষ্ঠানেই গায়ে তুলব।
তারপর ধীরে ধীরে পাল্টাবে সব।
শাড়ীর চকচকে, খসখসে ভাব কোমল হবে আরও।
এদিক ওদিক নাছোড়বান্দা কিছু দাগ পড়বে,
শৌখিন নীল জমি ধীরে ধীরে আটপৌরে হবে।
সূক্ষ্ম সোনালী সুতোয় অনাকাঙ্ক্ষিত কয়েকটা টান, আসবে একটু যেন খাপছাড়া ভাব।
তুলে রাখা শাড়ী হবে দৈনন্দিন।
সখ হবে প্রাত্যহিক জীবন যাপন।
একটা এমন শাড়ী দিও আমায়,
যেটা ছাড়া, আমার শীত গ্রীষ্ম বর্ষা হবে না মনের মত।
কুটনো কাটার সময় ভেজা হাত, রান্নার বাড়তি হলুদ বা তেল মাখা হাত,
সেই শাড়ির আঁচলে না মুছলে আমার ভাত হজম হবে না।
এমন শাড়ী, যেটার নীল জমি আর সোনালী পাড়, যখন আমার বাড়ীর বারান্দায় রোদ পোহাবে, তখন সামনের বাড়ীর মেয়েটা যেন তার স্বপ্ন আঁকতে পারে আমার দৈনন্দিন শাড়ীর গায়ে,
পাশের বাড়ীর ছেলেটা যেন দুচার লাইন কবিতা লিখতে পারে তার নীল কালির সোনালী নিবের পেন দিয়ে।
এমন একটা শাড়ী দিও, যেটায় আমি তোমায় দেখতে পাব।
একটু নতুন, একটু যেন পুরোনো ধরন,
আমার গন্ধে মানানসই হবে, আমার দুঃখ গুলো রাঙিয়ে দেবে,
আমায় একটা শাড়ী দিও
ঠিক তোমার মত
আমায় একটা সুখ দিও।।
Tuesday, 14 April 2020
।। শুভ পয়লা বৈশাখ, ১৪২৭।।
দূরে থাকো তুমি, দূরে থাকো ভালোবাসা।
হাওয়ায় মিশেছে বিষ, তাই নিষিদ্ধ যাওয়া আসা।
গাছে দাও জল, সাজাও গুছানো ঘর।
দূরে থাকো ভালোবাসা, এ বৈশাখী বেদনা বিধুর।
আকাশের গায়ে আঁকো মেঘ, ভাঙা ছাদে ভিজে যায় একা একা কাক।
যে চিঠি লিখেছো রাত জেগে, নীল খামে তুলে রাখা থাক।
পড়ন্ত বিকেলে জানি মনে পড়ে যাবে
কিছু অভিমান বাকি ছিল,
কিছু কথা বলা হয়নি অকারণ রাগে।
জেনো বৈশাখ একলা হয় না কখনো,
দেখো তুমি চোখ বুজে, আমি আছি, আছে সবই, ঠিক যেমনটা ছিল আগে।
অসময়ে তবু, এসো জানলার ধার ঘেঁষে দাঁড়াও।
দিনে রোদ আর রাতে চাঁদ মাখো মুখে।
এভাবেই দূরে থেকো তুমি, দূরে থেকো ভালোবাসা, আর থেকো সুখে।।
Friday, 10 April 2020
অপ্রার্থিত
একদিন সকালে হঠাৎ করেই
সূর্য ওঠার ঠিকআগে, সব পাখিরা
একসাথে বসেছিল আমার বাড়ির বারান্দা।
ডেকেছিল নানা সুরে।
সুতরাং নির্দিষ্টসম্যের আগেই ঘুম ভেঙেছিল।
তাই পুরো গল্পটা শেষকরা হয়নি।
ঐ যে সেই গল্পটা, যেটা সারা রাত অল্প অল্প করে
তুই আর আমি লিখছিলাম...
যে গল্পটা একই চোখের পাতায় দুজনে একসাথে
দুরকম কালিতে রোজ রাতে লিখতে বসি।
নানারকম অনুভূতি অভিজ্ঞতায় ভরিয়ে তুলি
রাত্রি ভরা চুপকথা...
কিন্তু একদিন মাঝ পথেই থামাতে হল
আমাদের গল্প লেখা, ঐ যে পাখি গুলো ডেকে উঠেছিল!
কি ছিল সেদিনের সেই শেষনা হওয়া গল্পে? মনে নেই,
শুধু মনে একটা ফাঁকা জায়গা খাঁ খাঁ করে পড়ে আছে।
খালি মনে হয়, অনেক কিছু লেখার ছিল,
পুরোটা সময় পেলে হয়ত শেষটায় অসাধারণ কিছু
বলা বা করা যেত!
মনে হয়, ঐ একদিনটা যদি পাওয়া যেত, তাহলে
বোধহয় ঐ গল্পটাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা দুজন
অমরই হয়ে যেতাম।
এখন রুক্ষ গরম হাওয়া কাঁধে শুকনো পাতা গুলো
রাস্তার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দীর্ঘশ্বাস ফেলে
উড়ে যেতে যেতে বলে যায়, 'গল্পটা শেষ হয়নি এখনো!'
হলুদ চাঁদটা করুণ মুখে নারকেল গাছের পাতা ধরে
ঝুলতে ঝুলতে বলে, ' শেষটা হয়ত সত্যিই সুন্দর হতে পারত!'
মূল কথা হল, সেইদিনটা ঠিক কবে ছিল, মনে নেই।
মনে নেই, সেই গল্পটাই বা কি ছিল।
শুধু মনে আছে, আমাদের একসাথে লেখা
একটা গল্প এখনো অসমাপ্ত পড়ে আছে...
Thursday, 2 April 2020
।। তুই আসবি যখন ।।
আমি কখনো ফুল বিছানো পথ দেখিনি চোখে,
তাই তুই বরং কালো পিচের রাস্তা ধরেই আয়।
আমি কখনো রামধনূ রঙ গায়ে মাখিনি জীবনে,
দেখিনি চাঁদের দেশের চরকা কাটা বুড়ীকে,
তাই তুই বরং ঐ চাঁদ তারা ফুল রামধনূ রঙ ভুলিয়ে দিয়ে
দিনের স্বচ্ছ আলো মেখে একটু বাস্তব হয়েই আয়।
তোর জন্য চাই তো আনতে একশো আটটা নীল পদ্ম,
সরাতে চাই পৃথিবীর সব জঞ্জাল, বাকি অনেকের মত।
কিন্তু জানিনা ঠিকানা পদ্মবনের, আর সত্যি বলতে কি
একার পক্ষে পৃথিবী পরিষ্কার করার ক্ষমতাও নেই আমার।
তার চেয়ে বরং তুই আয়, একটু ধৈর্য নিয়ে।
আমি কোদাল, ঝাঁটা, ন্যাতা জুটিয়ে রাখছি
দুজন মিলে ধূয়ে মুছে একটা পরিষ্কার দালান বানাবো তখন,
আর ফুল ফল গাছ নানারকম সাজাস বাগান তোর ইচ্ছে মত।
তুই আমার কবিতা হয়ে আয়, যে কথা বলা হয়নি, লেখা হয়নি, সেই অজানা কাব্য লিখবি আয়।
আমার না গাওয়া গানের সুর হয়ে তুই আয়।
অনেক গল্প বাকি আছে, একসাথে রাত জাগবো,
তুই আয়।
অনেক সুখ দুঃখ বাকি আছে, প্রাণ খুলে হাসব কাঁদব,
অনেক স্বপ্ন দেখার বাকি আছে, আয়,
ভালোবাসবি বলে আয়।।
Saturday, 21 March 2020
Ek chahat hai daba huya kahi.
Ek chahat hai daba huya kahi.
Ek khayal hai dhundla sa kahi.
Kamal ke patton par shabnam si
Ek intezaar hai thartharati kahi..
Mann hai uska parindo sa,
Par use Azad na kar saka.
Gham hai uska ghane badal jaisa
Par use barsa na saka.
Kabhi wada kya kiya tha woh
Jo patthar ban gaya dil uska.
Kabhi khwab Kya dekha tha usne
Jo andhio sa ban gaya har ek saans uska.
Woh insaan hi Kya!
Bahut shiddat se jo na pala ho lachaari apni.
Wohi ehsaas hai daba huya sa kahi,
Wohi mohabbat hai dhundla huya sa kahi..
Aey jism mubarak ho tujhe ruhaniyat teri,
Ek farmaish hai, jal ja tu abhi...
Ek khayal hai dhundla sa kahi.
Kamal ke patton par shabnam si
Ek intezaar hai thartharati kahi..
Mann hai uska parindo sa,
Par use Azad na kar saka.
Gham hai uska ghane badal jaisa
Par use barsa na saka.
Kabhi wada kya kiya tha woh
Jo patthar ban gaya dil uska.
Kabhi khwab Kya dekha tha usne
Jo andhio sa ban gaya har ek saans uska.
Woh insaan hi Kya!
Bahut shiddat se jo na pala ho lachaari apni.
Wohi ehsaas hai daba huya sa kahi,
Wohi mohabbat hai dhundla huya sa kahi..
Aey jism mubarak ho tujhe ruhaniyat teri,
Ek farmaish hai, jal ja tu abhi...
Wednesday, 4 March 2020
"সখী ভালোবাসা কারে কয়"..
পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে কোনো এক কানা গলির শেষের বাড়ীটা।
পলেস্তরা খসে যাওয়া দেয়ালগুলো গায়ে এখনো চেনা মানুষের গন্ধ মেখে দাঁড়িয়ে আছে।
এবড়ো খেবড়ো ইঁট গুলো দাঁত বের করা হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে মুখে।
বেমানান বটে তবে ওদের নাম 'স্মৃতি'।
আর পোড়োবাড়িটার ঠিক মাঝখানে, বুকের ওপর অর্ধেক ধসে যাওয়া ছাদ, দু-একটা মহীরুহ, কিছু ঝোপঝাড় পোকামাকড় ও সাপখোপ আগলে কোনো মতে বেঁচে থাকা উঠোনটা,
ওর নাম হল 'মায়া'।..
লোকাটা আজও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে বাড়ীটার সামনে, অপলক চোখে চেয়ে আছে দোতলার ভাঙা জানলার লোহার গরাদের দিকে।
এ গলির হাওয়াও ওকে চেনে -
ওর নাম 'প্রথম প্রেম'।
পুনশ্চঃ ও 'ভালোবাসা'।।
Sunday, 2 February 2020
"বাঁশির করুণ ডাক বেয়ে..."
সারাদিন যন্ত্রের মত জীবনটা কাটানোর পর,
ঠিক বিকেলের দিকে সব পাল্টাতে শুরু করে।
সূর্যের তেজ কমে আসে, সোনালী রেখার
আঁকড় লাগে মেঘেদের গায়ে, পাখিদের মধ্যে কেমন যেন ব্যাস্ততা বেড়ে যায়।
আর তখনই শরীরের মধ্যে কি কি যেন ঘটতে শুরু করে!
গায়ের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে থাকে, মাথার মধ্যে কত শব্দ এলো মেলো দানা বাঁধতে থাকে, গলার কাছে কিছু অনামী সুর বাউন্সিং বলের মত লাফাতে থাকে...
আর মানুষটা তখন বুকের বাঁ দিকটা চেপে ধরে, তালগোল পাকতে থাকা হৃদপিন্ডের ধুকপুকানি টা সামলাতে সামলাতে অলি গলি পেড়িয়ে এসে দাঁড়ায় বড় রাস্তার মোড়ে।
মানুষটা ভাবতে থাকে সেই কবে কোন যুগে শেষ বিকেল দেখেছিল, প্রান ভরে নিঃশ্বাস নিয়েছিল, সোনালী স্বপ্নের হাতে হাত রেখে বলেছিল, "ভালোবাসা "!
কে যেন একটা সাদা কাগজ ধরিয়ে দেয় হাতে। মানুষটার চোখে ঘোর লাগে।
তখন শহরের পশ্চিম দিকে কোনো ফ্লাইওভার এর পাশে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু বাড়ি গুলোর পেছনে লাল সূর্য লুকোচুরি খেলতে খেলতে হঠাৎই হারিয়ে যায় ধূসরে।
শহরে সন্ধ্যে নামলে মানুষটার গায়ে ধূম জ্বর আসে।
চোখ ঘোলাটে, নিঃশ্বাস পড়ছে কিনা, হৃদপিণ্ড চলছে কিনা বোঝা দায়!
স্ট্রিট লাইটের আলোছায়া গায়ে জড়িয়ে, সাদা কাগজ হাতে, টলতে টলতে মানুষটা রাস্তার ঠিক মাঝখানে এসে দাঁড়ায়।
হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে তার মনে পড়ে যায় ফেলে আসা সেই স্বপ্নের মুখ...
তারপর, লাল রঙ পড়ে কাগজে -
ভেসে যায় ভালবাসা।
মানুষটার নিথর শরীর শুয়ে থাকে রাস্তায়, সারা রাত ধরে, শান্ত বুকে যেন সেই ধলেশ্বরী নদীর তীরের অনন্ত গোধূলি লগ্নের প্রতীক্ষায়।।
Subscribe to:
Comments (Atom)