Wednesday, 30 November 2016

চন্দ্রগ্রহণ


কথা ছিল তোমাদের সাথে।
অনেক গল্প ছিল বলার, স্বপ্ন ছিল
তোমাদের সাথে দেখার।
অনেক দুঃখ ছিল যত্ন করে রাখা।
আর কিছু রাগ, আঙরার মত জ্বলজ্বলে।
এসব নিয়েই বলে যেতে চেয়েছিলাম
আমার পুরো জীবনীটা।
কিন্তু হল না.........

বড্ড বেশী ব্যাস্ত তোমরা, বড্ড কম সময়
তোমাদের হাতে।
দুদন্ড মুখোমুখি দাঁড়ানোর সুযোগ নেই।
চোখে চোখ পড়লে সরিয়ে নাও, যাতে
কথোপকথন দীর্ঘ না হয়ে দাঁড়ায়।

তোমাদের ঘোড়দৌড়ের জীবনে আমি
চেয়েছিলাম আমার ইতিহাস্টুকু শুনিয়ে যাব তোমাদের।
কি সাংঘাতিক নিবোর্ধ আমি......
তোমরা তো অনেক আগে থেকেই সবটা জানো,
বোঝোও তো অনেক কিছু।
শুধু চুপ থাকো, কথায় কথা বেড়ে যাওয়ার ভয়ে।
কে জানে তোমাদের বিনাবাক্যের দুনিয়ায়
আমায় কে দিলো এত কথা বলার ইচ্ছা!!

এতদিন বসেছিলাম আমার সারা রাত্রির
অঢেল সময় নিয়ে...... কিন্তু তোমরা তো
কিছুই শুনলে  না......
এবার আমার সময় শেষ হল।
আকাশের গায়ে ভোর হচ্ছে......এবার
আমায় ঘুমোতে যেতে হবে......

Tuesday, 4 October 2016

উপহার


তোমাকে দিয়ে যাব আমার শেষ নিঃশ্বাস...
অন্ধকারে পড়ে থাকা মন, আর
হাহাকারে ফেটে পড়া হাসি...... যদি দেওয়া যায়!!

তোমাকে দিয়ে যাব আমার প্রথম চীৎকার...
গুমড়ে মরা রাগ, আর
কুড়ে কুড়ে খাওয়া অপরাধ বোধ...... যদি দেওয়া যায়!!

তোমায় দিয়ে যাব আমার প্রতিটা
স্বপ্ন ভাঙা ঘুম...
ছিঁড়ে যাওয়া ভালোবাসা, আর
রক্তাক্ত গোলাপের বৈতালিক প্রতিশ্রুতি......

যদি দেওয়া যায়, তোমায় দিয়ে যাব এসব কিছুই,
যা আমার সম্বল, পরিচয়...
তোমাকে দিয়ে যাব দারিদ্র্য, এক জীবন
জর্জরিত দুরাশায়...
তোমাকে দিয়ে যাব জীবিত থাকার
সমস্থ রকম অমুল্য সহায়।। 

Saturday, 24 September 2016

।। পড়সী ।।

সকাল বিকাল মুখ দেখানো, হয় ভাব নয় আড়ি
পেঁচি সুন্দরী, কাজ কর্ম নেই বুঝি আজ কোনো!!
খোলা ছাদে পাশের বাড়ির কতই না পায়চারী,
হতভাগী ওই গান গাইছে...... শোনো।।

কপাল জুড়ে মস্ত একটা টিপ
পটলচেরা চক্ষু রানী, আবার তাতে
কাজল মাখলি কেন!!
পাশের বাড়ির মন কেমনে
বুক করে ঢিপ ঢিপ,
হতভাগী আবার গান গাইছে......... শোনো।।

আকাশ জোড়া বেখেয়ালী বৃষ্টি নামার বায়না
অকারণে মেঘ ডাকালি, পোড়ামুখী,
সবই তোর কল্পপুরি যেন!!
পাশের বাড়ির নীলচে শার্টের সাক্ষী থাকা
কলঘরের ওই আয়না,
আজকে আবার হতভাগী গান গাইছে.........শোনো।।

Saturday, 17 September 2016

।। আগমনী ।।


আরো সুন্দর হোক ভোরের সূর্য
নাগরিক ক্লান্তিতে।
আরো নির্মল হোক হাওয়া
শহুরে শান্তিতে।
আরো উজ্জ্বল হোক স্বপ্ন
তোমার চোখের কাজলে।
আরো সহজ হোক ইচ্ছা
নীলচে সুখের আঁচলে।
তোমার নিভৃত লাজুক হাসি
আবার ঘনিয়ে উঠুক ঠোঁটে।
আরো একবার বৃষ্টির শেষ জলটুকু ছুঁয়ে
যেমন মেঘলা দিনে রামধনু রঙ ফোটে।
আরো নিখুঁত হোক চাউনি
জমাটি অভিমানে।
আমাদের শৌখিন হোক আশা
এ হেন ভৌতিক দিনমানে।
এইতো সময়, এবার সমৃদ্ধ হোক মোহ
মায়ার উপবনে।
আরো আরো স্পষ্ট হোক ভালোবাসা
শুধু কবিতার সন্ধানে।।
              

Tuesday, 6 September 2016

।। শ্রীরাধিকার শেষপত্র ।।


হল তো বেশ অনেকদিন।
এবার ছাড় না এসব ধ্যান্তারামো।
কোকিল টোকিল নাইবা ডাকালি অষ্টপ্রহর।
ময়ূর নাচানো বন্ধ কর না বনের ধারে।

তোকে আর বাসি না ভালো আগের মত।
সত্যি কথা, কিচ্ছুটি নেই আগের মত।
আপাদমস্তক বদলে গেছি আমরা কবেই।
তুইও বেশ ভালোই জানিস,
এ শহরে উঠতে বসতে সময় কোথায়
দু-চার দফা দীর্ঘশ্বাসের!
দিনযাপনের হিসেব নিয়ে
আমি যখন ব্যাস্ত থাকি,
তুইও তখন জমা খরচ মিলিয়ে নিতে
ছুটে মরিস ইঁদুরকলে।
আগের মত কারইবা আর সময় আছে
আকাশ দেখে গল্প লেখার?
চাঁদ তারা ফুল জড়িয়ে ধরে
নতুন নতুন স্বপ্ন দেখার?

কিচ্ছুটি নেই আগের মতন তুইও জানিস......
বৃষ্টি হলে শহর ভেজে আগের মতন।
আজ চেয়ে দেখ আমরা কেমন কাদা মাখি
হাত পা মুখে।

এখন আমরা জেনে গেছি
প্রেম প্রেম ভাব দিব্যি লাগে কাব্যে গানে।
তাই জন্য বলছি তোকেও কবিতা লেখ।
পারলে দু-চারখানা গানও লিখে ফেলতে পারিস।

আমায় শুধু থাকতে দে ভাই আমার হালে।
তাকাস না আর অমন ভাবে আমার দিকে।
সাঁতার জানিনা, অত গভীর চোখের ভিতর
খুব সহজেই ডুবে মরব বিনাবাক্যে!
বলিস না আর অমন কথা আমার সাথে।
যেন আমার জন্য বেছে রাখা তোর শব্দমালা
যেন আমায় চিনিস কত জন্ম আগের থেকে!

ভালোই জানিস, তুই আমার কাছেও নেই, পাশেও নেই।
আমিও জানি পারব না তোর
পাশেতে দৌড়ে যেতে
কিম্বা থাকতে দুঃখে সুখে।

তাহলে কি দাঁড়ালো শেষকালেতে......
মনের কথা কদম গাছে ঝুলিয়ে
রাখাই বুদ্ধিমানের।

বলছি আবার স্পষ্ট করে
ভালো আমি বাসছি নাকো আগের মত
তোকে আর আমার করে......... 

Saturday, 20 August 2016


।। মালতী লতা দোলে।।


ভালো থেকো মালতী।।
তোমার বৃন্তে আমি সাজালাম
আজিকার শেষ বর্ষা।
তোমার চিকন পাতায় দিলাম
চির সবুজের প্রতিশ্রুতি।

তুমি ভালো থেকো মালতী,  আমার রাত জাগা স্বপ্নে।

আজ শেষ শ্রাবণের হাওয়ায় মিশিয়ে দিলাম
তোমার বুকের সুগন্ধি ব্যাকুলতা।
কোনো চপলা অভীসারিকার
নিভৃত প্রতীক্ষায়, তুমি ভালো থেকো।

তোমার স্নিগ্ধ রূপে আমি লিখে দিলাম সিক্ত সুখ,
আমার অনন্ত ভালোবাসায়, মালতী, তুমি ভালো থেকো।। 

Sunday, 14 August 2016

কখনো কি দেখেছো তুমি আকাশের বুকে
লাল, কালো, সাদা মেঘেরা কেমন
দুঃখ লিখে যায় প্রতিদিন।
আকাশ কখনো তা মুছে দেয় চোখের জলে
কখন পুড়িয়ে দেয় রাগে অভিমানে......

কখন দেখেছো কি তুমি কেমন
পাহাড়ে পাহাড়ে ঠোকাঠুকি লেগে যায় রোজ,
কত পথ চলার আগেই পাথরে হোঁচট খেয়ে
থেমে যায় সুখ।
পাহাড় তাকে নদীর গল্প বলে, বলে
কত স্বান্তনা চিরকাল বুকে চাপা আছে তার.........

কখনো শুনেছো হাওয়ায় হাওয়ায়
দীর্ঘশ্বাসের গান বুনে দেয় কত বিকেল।
ঝরা পাতা গোধূলীলগ্ন গুলোকে খুব যত্নে
বাক্স বন্দী করে রাখে প্রেম।
তারপর রাত নামলে বিকেল শোনায় পৌরানিক
কাহিনী, "এক যে ছিল রাজা, আর এক যে ছিল রানী"......

তুমি বোঝোনি কেন তোমার কাছে
আমি থাকিনি কখনো,
কেন দূর দিয়ে কথার দাগ কেটে কেটে
সীমানা বানিয়েছে তোমার আমার মাঝে,
তুমি বোঝোনি রাতের অন্ধকার
কেন আমার এত প্রিয়,
কেন আমি স্বপ্ন দেখতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলি
নাম, ধাম, বয়স.........

যদি কখনো আকাশের দিকে দেখো,
যদি কখনো পাহাড়ের বুকে হাঁটো,
কখনো যদি কান পাতো হাওয়ায়,
গায়ে মাখো বিকেল......
কথা দিলাম, আমি ছুঁয়ে যাব তোমায় শিরা উপশিরায়।

কালের দীগন্ত পেরোনো সীমানায়
তোমায় চেয়েছি আমি......
কালো রাতের গায়ে ভালোবাসা লিখেছি
তোমার জন্য এক একটা তারা দিয়ে,
অল্প অল্প করে পড়ে নিও যদি কখনো
বুঝতে চাও আমায়.........

কথা দিলাম, সেদিন যুগান্তর পেরোবো আমি
তোমার সাথে............... এক সাথে।।

Saturday, 6 August 2016

শুনেছি সাদা পাতায় কলম ছোঁয়ালে
নাকি যাদু সৃষ্টি হয়
সেই যাদুতে অনেক শক্তি থাকে,
বিশ্বসংসার ওলট পালট করার মন্ত্র থাকে।
শত সহস্রাব্দের ভাষা নাকি ইতিহাস থেকে জেগে উঠে
বর্তমান, এমনকি ভবিষ্যৎও লিখে ফেলতে পারে
শুধুমাত্র লেখনীর জোড়ে।

বেশ, যদি তাই হয়,
লিখব তবে - পাতার পর পাতা,
লিখব তবে প্রাণ, লিখব গান......
যদি তাতে জীবনের সুর ছুঁয়ে যায়
এই বিশ্বের মড়কের কালে।
লিখব নির্মল জলবায়ু, লিখব সুসাস্থ্য......
তাতে যদি বিঞ্জান মিশে যায় অবৈঞ্জানিক মানুষগুলোর
অসহায় রোগশয্যায়।

এ মরণের দিনে, যদি বাঁচতে পারে মন
লেখনী যদি বাঁচাতে পারে আশা.........
তবে লিখব আমি অমরত্ব, লিখব ভালোবাসা।।

Friday, 5 August 2016

।। ঠিক যেন প্রেমের মতন ।।


ওরা রোজ আসত একসাথে।
না, হাতে হাত রাখেনি কখনো।।
কত কথা বলে যেত সময় পার করে।
না, চোখে চোখ রাখেনি কখনো।।

হাসি, কান্না, রাগ, অভিমান - আবেগ তো
কম ছিল না দুজনারই......
ওরা একে অন্যের পাশে ছিল রোজ।
না, কাছে আসেনি কখনো।।

ওদের ভাবনা, স্বপ্ন, অনুভূতি মিশে গেছে
শহুরে হাওয়ায়.........
ওরা রোজ অকারণে রাস্তা বদলেছে
একে অপরের থেকে।
না, হারায়নি কখনো।।

ওদের রোজনামচার গল্প লিখছি আমি।
ওদের সুখ দুঃখ বাঁধছি কাব্যে সুরে।
ওরা আমার স্বপ্নে আসে রোজ।
না, ওরা ভালোবাসেনি কখনো।।


।।  প্রসাদী ।।


একটা রঙিন কোনো স্বপ্ন দাও হাতে,
সারা রাত যেন মুঠো বন্ধো রাখতে পারি।

একটা ভীষণ সাদা আলো দাও ঘুমে,
যেন এক আকাশ তারা গিলে ফেলতে পারি।

আর দিও তোমার ভুবন জোড়া হাসি,
চোখের জলকে যেন ভালোবাসতে পারি।

এইটুখানিই চেয়েছিলাম
তোমার দিকে চেয়ে.........

অবাক হয়ে থাম্‌লে খানিক,
"তথাস্তু" তে বললে পরে
"মরুর বুকে দিনের আলোয় গিরগিটি হও মেয়ে"।।

Wednesday, 3 August 2016

ছন্দপতন বারংবার

।। ছন্দপতন বারংবার ।।


এখানে বৃষ্টি পড়ে বারোমাস,
এক হাঁটু জল পেরিয়ে চিরকাল চলে হাঁটা চলা।
এখানে হাওয়ায় হাওয়ায় দীর্ঘশ্বাস,
খুব নীচু গলায় চলে কথা বলা।।

আকাশের রঙ এখানে ধূসর,
দিনের আলো নেই বললেই হয়।
ধূ ধূ করে একলা বালির চড়,
মনে হয়, নদী ও জল কেউ কারোর নয়।।

সবুজ এখানে বসায় না পাঠশালা,
কালো রাস্তায় ঘরের পরে ঘর।
এখানে হয় না রাতের প্রদীপ জ্বালা,
আপন, এখানে নিতান্তই পর।।

এখানে বৃষ্টি পড়ে অঝোরধারায়,
চারদিকে আটকে যাওয়া জল।
এখানে কূটীল যুক্তি রাতের তারায়,
চলে ময়লা জলের নাচন ছলাৎছল।।

মাথার ওপর আকাশ পড়োপড়ো,
কাজের চাপে কিছুই যায় না চেনা।
কেউ কিছু সময় করলে জড়ো,
অন্যে ভাবে অনেক দামে কেনা।।

প্রেম এখানে দোকানের র‍্যাকে মেলে,
ফুলেরা যত মিথ্যে বলতে শেখায়।
আবেগটাকে মদের গেলাসে ঢেলে,
ভালোবাসা শূন্যে মিলিয়ে যায়।।

কবিতাতে আজ ভীষণ ভারী ধোঁয়াশা,
গানে আজ সুর মেলানো ভার।
চোখে শুধু শীতের জমাট কুয়াশা,
সুখের তাপে জীবন ছাড়খার।।

এখানে কল্পপুরীর ভাবনিলাসী নারী,
চ'ড়ে বাদল মেঘের রথে,
পড়ে তোমার চোখের রাত্রি জাগা ভাষা
চলে আমার বুকের স্বপ্ন মোড়া পথে।।

এখানে বারো মাস বৃষ্টি পড়ে,
ঝড়ে ভাঙে চড়ুই পাখীর বাসা।
এখানে কাঁদলে বুকের রক্তে ঝরে পড়ে,
তবু কথায় আছে - "আশায় বাঁচে চাষা"।।

Tuesday, 2 August 2016

।। অগস্ত্যযাত্রা ।।


যেতে হবে চলে...
বিষন্ন বিকেলের মত
মুছে যেতে হবে, একদিন।
চেনা শহর, গ্রাম, ধানক্ষেত, বহুদূরের বন জঙ্গল পেরিয়ে 
খোলা মাঠের দীগন্ত ছুঁয়ে থাকা
কোণটার দিকে এগিয়ে যেতে হবে
এক এক পায়ে।
চলে যেতে হবে।।

তবে পরে থাক্‌ যত কোলাহল, যাতনা।
পরে থাক্‌ যত নিভৃত ভ্রূকুটি, ছলনা।
তবে ধূলো মাখা স্মৃতি হয়ে যাক্‌
আধ্‌খানা পড়ে নেওয়া জীবনের খাতাটা।।

এইতো সূবর্ন সুযোগ।
জন্মের পর থেকে সেই যে চলা শুরু হয়েছে
এত দিনে গতি বেড়েছে পায়ে
চলে যাওয়া যায় সহজে এখন। 
পিছুটান যা কিছু আছে
আপনা থেকেই ছিঁড়ে যায় এই আকালে।

মূঢ় রাত্রির মায়া ফেলে যদি যেতেই হবে চলে,
তবে যাওয়া যাক্‌ "অনন্ত গোধূলী লগ্নে",
যেখানে কেউ প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে বলবে, 
"এত দিন কোথায় ছিলেন"!

সেইখানে, যাত্রা হবে শেষ।
তখন ডেকে বলবে সকাল,
"দাঁড়াও পথিকবর, তিষ্ট ক্ষ্ণকাল"।।

Saturday, 30 July 2016

একলা জীবন

।। একলা জীবন ।।



জন্মলগ্ন কলার ভেলায় ভেসে গেছে,
জন্মচিহ্ন লুঠ করেছে ডাকাত দলে,
ইতিহাস যা ছিল কিছু -
উই-এর কৃপায় ছিন্নভিন্ন,
সুখ স্মৃতি ভস্মিভূত দাবানলে।।

চোখের ওপর ধোঁয়াশা, তবু দৃষ্টি প্রখর
ঘোলাটে কোনো সাগর তলার দস্যুপুরী।
মণিমাণিক্য জমিয়ে রাখার নেই প্রয়োজন
শুধু যেন জীবন চিড়ে রক্ত খাওয়ার মারামারি।।

এলোমেলো চুলের জটে ভারি মাথা,
মুখের ভাঁজে কালো ছোপের ময়লা আদল,
সভ্যতার বুকের ওপর  দাঁড়িয়ে থাকা
জীব নয়, তবু জীবের মতন -
একলা পাগল।।

দিনের আলোর ঝল্‌কানিতে দগ্ধ হওয়া,
খাবার খোঁজা পথের ধুলোয় পেটের টানে,
চলার পথে তাল হারিয়ে পিছ্‌লে পড়া,
রাতের নেশায় স্বপ্ন দেখা -
সে তো শুধু রাত্রি জানে।।

হাওয়ায় হাওয়ায় ঘর পোড়া এক গন্ধ আসে,
মনের ভিতর চোর ডাকাতের দাপাদাপি,
নিথর ঠোঁটের বন্ধ ঘরের প্রশ্ন যত -
অবহেলার বেনো জলে আবেগ ভাসে।।

ভুত- ভবিষ্যৎ থম্‌কে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা,
শহর জোড়া হাহাকারের নীরব শ্রোতা,
দুর্বিসহ কোলাহলের হট্টমেলায়
মৃত্যুহারা মৃত্যঞ্জয় -
একলা জীবন।।

Friday, 29 July 2016

।। অ- মুল্য ।।


আমার ভালো-মন্দে কি যায় আসে আর...
তুমি ভালো আছো তো?

আজও সূর্য উঠেছে লাল আকাশ জুড়ে।
আমার দেখা না -দেখায় কি যায় আসে আর...
তুমি দেখেছো তো?

রোজই ভাবি অন্য স্বপ্ন দেখি,
রোজই ভাবি অন্য কিছু করি।
আমার ভাবনায় কি যায় আসে আর...
তুমি নতুন কিছু সৃষ্টি করেছো তো?

চোখের জলে ভিজে যাওয়া স্মৃতি,
রক্তে ঘামে মাখামাখি অতীত যুদ্ধ জয়।
আমার হার জিতে কিইবা আসে যায়...
তুমি ভাবি কালের আগুন জ্বেলেছো তো?

ঠান্ডা ঘরের নীথর শান্তি বুকে,
মানব জীবন গদ্যে কাব্যে ছারখার।
আমার ঘৃণায় আর কিইবা আসে যায়...
তুমি নতুন করে ভালোবেসেছো তো?!
।। সামান্য মৃত্যু ।।



আমাকে মেরো না
আমি প্রতিবাদ করিনি।
শৈশব কৈশোর পেরিয়ে যৌবন -
কোনো দলে আমি মিশিনি।
শাসক বা বিরোধী - কখনো কারো চোখে পড়িনি,
আমাকে মেরো না
আমি বিক্ষোভ প্রকাশ করিনি।

স্কুল, কলেজ হয়ে চাকরি জীবন
হোঁচট খেয়েছি, পিছলে পড়েছি ধাক্কায়।
হাত পা মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে চলেছি,
দাঁত ভাঙ্গা গালে মুখ ভরা রক্ত মেখেছি,
তবু উঃ!আঃ! করিনি।
আমার শাসিয়ো না
আমি তো ঘাড় উঁচু করিনি।

শুধু বিজ্ঞাপণে নয়, যখন শহরের
মুখ ঢেকেছে স্লোগানে, পোষ্টারে,
আমি পথে নামিনি।
আমাকে বন্দুক দেখিও না
আমি এখনো অত সাহসী হই নি।

গোলাপের কাঁটা বাবলা কাঁটা হয়ে বিঁধেছে বুকে,
বর্শার ফলার মত কথায় দোফালা হয়েছে মাথা,
কাটফাটা রোদ্দুরে, পিচ গলা রাস্তায়
এক চিলতে সবুজের প্রতিশ্রুতি পেয়েও
কখনো "প্রাণ আছে" বলিনি!
আমাকে মেরো না
আমি কারো নাম ধরে ডাকিনি।

বুকের ভেতর এখনও ধক্‌ ধক্‌ করছে জীবন।
মুখে চার ফোঁটা জল পেলে
আবার পারবো উঠে দাঁড়াতে।
বিপ্লব আন্দোলন কিছুইতো চাইনি আমি,
শুধু চেয়েছি বাঁচার মত বাঁচতে।
দু এক কলম লিখতে চেয়েছি আমি,
জীবিত, মৃত সবার মুখ চেয়ে।

একটু আগেই ছিলে লাঠি হাতে মার মার উদ্যত
এখন  এসেছ হাতে ফুলের মালা নিয়ে?!
আমার জন্য জাতীয় সঙ্গীত গেও না
সাধারন আমি -
মার খেয়েছি, কোনো বীরের কাজতো করিনি।
ভালোবাসার চোখের জলে পুড়িয়ে আমায় মেরো না -

আমি  তো এখনো মরিনি.........

Thursday, 28 July 2016


।। আশঙ্কা ।।


কত ভালোবাসা থেকে যায় 
কথা বলা আর না বলার মাঝে।
কত স্বপ্ন থেকে যায় 
চাওয়া না চাওয়ার মাঝে।
তবু, আমরা নাম খুঁজে ফিরি পথে - ঘাটে,
পরিচয় কিনি বেচি হাটে বাজারে।
বড় ভয় পাই নিলামের হাঁকে বেওয়ারিশ হয়ে যেতে.........

আমরা দেখিনা চোখের আড়ালে চলে যায় 
কত সুখ প্রতিদিন।
আমরা দেখিনা চোখের টলায় জমতে থাকে 
পরতে পরতে প্রেম।
আমরা বড় উদাসীন ভাবে কাজ নিয়ে ছুটে যাই শহরে বন্দরে.........
খানাতল্লাশি চালিয়ে বেড় করে আনি
অর্থ যুক্ত শব্দ মগজের গভীরতা থেকে।
তবু কেন ভুলেও শুনিনা, কত সুর ছিঁড়ে যায়
প্রতিদিন যন্ত্রে হাত ছোঁয়ালে।
আসলে ভয় পাই আমরা
সেতারের অভীসন্ধি কে............

সারা রাত ঘড়ির কাঁটায় কাঁটায়
অভিশাপ বুনে বুনে ভোর আনি আমরা জীবনে।
কত কল্পনার গলা দুহাতে টিপে ধরে
বাঁচার আশ্বাস খুঁজি প্রতিনিয়ত। 
"তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না",  এ- হেন মিথ্যের
প্রমান জোগাড় করে হাতে তুলে দিই 
একে অন্যের।
তবু কেন বুঝিনা আমার অস্তিত্ব তোমারি বুকের পাঁজরে......
প্রতিদিন এভাবেই আমরা হারিয়ে যাই,
হারিয়ে ফেলার ভয়েতে।।

Wednesday, 27 July 2016

।। অবান্তর কথোপকথন ।।


   -  রাতের রঙ কি?
বোলো না নীল কিংবা কালো, 
বোলো না সাদা কিংবা রঙিন!

-  আচ্ছা বেশ, তুমিই বলো তাহলে...
আর কিইবা হতে পারে!

এইটুকু বলেই চুপ করেছিল সে।
সত্যি বলতে কি উত্তরটা জানা ছিল না আমারো,
শুধু কথা শুরু করার খাতিরে, 
পেড়েছিলাম আষাঢ়ে গল্পটা।

কিন্তু ওর চুপ করে যাওয়াতে থম্‌কে গেল আমার মনটা।
চেয়ে দেখলাম খুব শান্ত চোখ তুলে তাকিয়েছে সে আমার দিকে।
যদিও উত্তর এক্তা চেয়েছিল সে আমার কাছে - 
তবু দেখি, তার চোখে স্বপ্ন স্থির,
যেন দীগন্ত পেরোনো অচেনা কোনো মহাকাশ।
নিথর ঠোঁটের শিকলে যেন  সে লুকিয়ে রেখেছে পূর্বজন্মের অট্টহাসি।
তার চাপা দীর্ঘ নিঃশ্বাসের গভীরে যেন 
ঘুমিয়ে রয়েছে সুনীল সাগরের জলচ্ছাস।
আমার শব্দ হয়ত ছোঁবে না তাকে। 

সে আমার চোখের থেকে চোখ নামাতেই, বলে ফেললাম,
 - রাতের রঙ লাল......
অস্তমিত সূর্যের যে লাল,
ধোঁয়ায় ঢাকা শহুরে আকাশের যে লাল,
যে রক্তাভ স্বপ্ন সারা রাত শরীর জুড়ে থাকে,
রাতের বুক চিরে দেখ......... তারও ভালোবাসার রঙ লাল।

এবার এইটুকু বলেই চুপ করলাম আমি।
.........কখন যেন ঝরে পড়ে শুকিয়ে গেছে
দুফোঁটা জল তার হাতের পাতায়।

কাছে গিয়ে দেখি - 
সেই স্থির স্বপ্নের আজ রক্তাক্ত চোখের জল।।